ভাসিয়ে দেওয়া নারীর মরদেহ দাফনে বাধা, সত্যতা পেল তদন্ত কমিটি

by

পোশাক কারখানার শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের (২২) মরদেহ দাফনে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বাধা প্রদানের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফরের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠের অনলাইন ভার্সনে ‘অমানবিক : তিস্তায় মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়া নারী করোনায় মারা যাননি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন এক সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। 
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) রফিকুল ইসলাম তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এতে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতের বিরুদ্ধে মরদেহ দাফনে বাধা প্রদানের বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে। তদন্ত রিপোর্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলেও সূত্রটি জানায়।

গত ২১ মে পোশাক কারখানার শ্রমিক মৌসুমী আক্তার গাজীপুর থেকে ট্রাকে করে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে রংপুরের তাজহাট এলাকায় এসে চালক বুঝতে পারেন মৌসুমী মারা গেছেন। এরপর তার মরদেহ রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যান ট্রাকটির চালক ও হেলপার।

পরে ৯৯৯ এর খবরের ভিত্তিতে তাজহাট থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে ২৩ মে পুলিশ মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফার কাছে তার মেয়ের মরদেহ হস্তান্তর করে।

মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতকে মোবাইলে বিষয়টি অবগত করে নিজ এলাকায় মরদেহ দাফনের অনুমতি চান। কিন্তু চেয়ারম্যান ওই মরদেহ করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে তার পরিবার ও মরদেহবাহী গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

নিরুপায় হয়ে হতভাগ্য গরিব বাবা মেয়ের মরদেহ দাফন করতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকার একজন লাশবাহী গাড়ি চালকের সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা চুক্তি করেন লাশ দাফনের। চালক মরদেহ দাফনের আশ্বাস দিয়ে গোলাম মোস্তফাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে মরদেহটি তিস্তা নদীতে ফেলে দেয়। পরদিন রাতে স্থানীয়দের খবরে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধন গ্রামে তিস্তা নদী থেকে সরকারি ব্যাগে মোড়ানো অজ্ঞাত মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। 

এদিকে মৌসুমী আক্তার করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায়। তিনি জানান, এর আগে মৌসুমী আক্তারের নমুনা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।

লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা জানান, মরদেহ পাওয়ার পর আদিতমারী থানায় একটি জিডি করা হয়। সেটি নিয়ে পুলিশ তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দ্রুতই ঘটনার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।