লিবিয়ায় বাংলাদেশি হত্যা, মাদারীপুরের নিখোঁজদের পরিবারে উৎকণ্ঠা

by

লিবিয়ায় গুলি করে ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এতে নানাভাবে শোনা যাচ্ছে মাদারীপুরের ১৩ যুবকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে উদ্বিঘ্ন উৎকণ্ঠায় রয়েছেন রাজৈরের কয়েকজন নিখোঁজ যুবকদের পরিবার। তারা জীবিত, না কি মৃত তার কোনো সঠিক তথ্য মিলছে না। ওই হতাহতের ঘটনায় এদের কেউ রয়েছে কি না তারও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলে পরিবারগুলোর দাবি।

এদিকে লিবিয়ায় হতাহতের ঘটনার খবর শুনে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশি দালাল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের জুলহাস শেখ এর বাড়িতে হামলা করেছে নিখোঁজ যুবকদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী। এ খবর পেয়ে রাজৈর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় দালাল জুলহাস নিজেকে করোনা রোগী বলে পরিচয় দেয়। এতে করে পুলিশ জুলহাসকে নিয়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করেছে বলে পুলিশ জানায়।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার হোসেনপুরের আবদুর রহিম, বিদ্যানন্দী গ্রামের জুয়েল হাওলাদার (২২) একই গ্রামের মানিক হাওলাদার (২৮), টেকেরহাট এলাকার আসাদুল, মনির হোসেন ও আয়নাল মোল্যা, ইশিবপুর এলাকার সজীব ও শাহীন, মাদারীপুর সদর উপজেলার জাকির হোসেন, জুয়েল হোসেন, সৈয়দুল, ফিরোজ ও শামীম নিখোঁজ আছে। তবে নিখোঁজ এইসব যুবকদের নাম শোনা গেলেও অনেকের সঠিক পরিচয় না পাওয়ায় তাদের পরিবারকে খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে। 
আবার অনেক পরিবারের লোকজন জানেও না তাদের সন্তান আদৌ বেঁচে আছে কি না। অনেকে আবার হত্যাকান্ডের খবরও শোনেনি।

রাজৈরের হোসেনপুর ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিখোঁজ জুয়েল হাওলাদারের বাবা রাজ্জাক হাওলাদার ও মা রহিমা বেগম বলেন, আমাদের ছেলেসহ রাজৈরের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজনকে দালাল চক্র লিবিয়া নেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪-৫ লাখ টাকা চুক্তি করে নিয়ে যায় প্রায় ৩-৪ মাস আগে। তারপর লিবিয়ার ত্রিপলী না নিয়ে বেনগাজী নামে এক গ্রামে আটকে রেখে নির্যাতন শুরু করে। এরপর ভয়েজ রেকর্ডে নির্যাতনের শব্দ পাঠিয়ে আরো ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আমরা রাজৈরের হোসেনপুর জুলহাস শেখ নামের ওই দালালের বাড়িতে গিয়ে ১০ লাখ টাকা দিয়ে আসি। মানুষের কাছে শুনতে পাচ্ছি লিবিয়ায় গুলি করে অনেক বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের ছেলে বেঁচে আছে কি না তাও জানতে পারছি না। এখন পর্যন্ত ছেলের কোনো খোঁজ পায়নি।

একই গ্রামের নিখোঁজ মানিক হাওলাদারের বাবা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, আমার ছেলে মানিককে লিবিয়া নেওয়ার কথা বলে দালাল জুলহাস আমার কাছ থেকে প্রথমে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। পরে ছেলেকে বেনগাজী আটকে রেখে ভয়েজ রেকর্ডের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আমি আমার ছেলেকে আনতে জুলহাসের বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়ে আসি। এখনো আমার ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শওকত জাহান বলেন, লিবিয়ায় লোক নেওয়া দালাল রাজৈরের জুলহাস শেখের বাড়িতে এলাকাবাসী হামলা করে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা ওই বাড়িতে গেলে জুলহাস বলে আমার করোনা হয়েছে। করোনার কথা শুনে আমরা জুলহাস শেখকে মাদারীপুর সদর হসাপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করি। 

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশীদের হত্যার কথা শুনেছি। যাদের মধ্যে মাদারীপুরের লোকজনই বেশি। মাদারীপুরের কতজন মারা গেছে এ তথ্য আমি এখন পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পায়নি। মন্ত্রণালয়ে আমি যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে আমাকে মাদারীপুরের কতজন মারা গেছে সে তথ্য দিবে। লাশ দ্রুত কিভাবে দেশে আনা যায় আমি সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছি।