চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ১৩ কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত

by

রাজস্ব আদায়ে দেশে এককভাবে শীর্ষে থাকা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ১৩ কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে পুরো কাস্টম হাউসজুড়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মূলত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা কাস্টম হাউসে কাগজপত্র জমা অনুমোদন নিতে গিয়ে শারীরিক দূরত্ব না মানায় আতঙ্কের পরিমাণ বেশি।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের গোয়েন্দা শাখা (এআইআর) প্রধান ও সহকারী কমিশনার নুর এ হাসনা সানজিদা অনুসুয়া বলেন, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কাস্টম হাউসের ১৩ জন কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এর মধ্যে ছয়জন রাজস্ব কর্মকর্তা, ছয়জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এবং একজন কম্পিউটার অপারেটর। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন বিভাগের ওয়ান স্টপ সার্ভিস অফিসের এক কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর বন্দরে কাস্টম কর্মকর্তাদের নজরদারিও কমে গেছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯২ ভাগ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। আর এই কাজের শুল্কায়ন হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে; ফলে রাজস্ব আয়ে এককভাবে শীর্ষে রয়েছে এই কাস্টম হাউস।

শুল্কায়নের বিশাল এই কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে গিয়ে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মালিক এবং কর্মচারী ও অন্যান্য সেবাগ্রহীতা মিলিয়ে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার লোক প্রবেশ করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। প্রবেশ পথে যথেষ্ট সুরক্ষা মানার পদক্ষেপ নেওয়ার পরও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে কর্মকর্তাদের মধ্যে। 

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে প্রতিদিন যে পরিমাণ লোক প্রবেশ করে বাংলাদেশের কোনো অফিসে এই পরিমাণ লোক প্রবেশ করে না। তাই কাজ করতে গিয়ে কাস্টম কর্মকর্তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। 

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কাস্টম হাউসে প্রবেশের প্রধান গেটে হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটার দিয়ে সবার তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। মাস্ক পরা ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। 

তাছাড়া ট্রেনিংরুম, অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরি রুমসহ বিভিন্ন স্থানে কাস্টম হাউসের দপ্তরসমূহকে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। প্রতিদিন সব কর্মকর্তার তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। কোনো কর্মকর্তা অসুস্থবোধ করলে তাকে বাসায় থাকতে বলা হচ্ছে।

কাস্টম হাউসের তিন তলা ভবনের প্রতিটি ফ্লোর, নিচতলায় ব্যাংকের সম্মুখে এবং কাস্টম হলরুম, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হলরুম প্রতিদিন লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। পুরো কাস্টম হাউসজুড়ে করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে প্রতিদিন দুই হাজারেরও অধিক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কর্মী কাজ করেন। সরু সিঁড়ি দিয়ে গাদাগাদি করে চলাচল করতে হয়।

শুল্কায়নের জন্য কাস্টম হাউসের হলরুম এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগে থাকে উপচেপড়া ভিড়। কোনোভাবেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। সুরক্ষা পোশাক না থাকায় কর্মীরা প্রতিনিয়ত করোনা সংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছে।