https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/30/73414e386fe350fa7fe3aa2ed986618f-5ed155afea147.jpg

করোনায় বোধ ও বোধোদয়

by

করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: dp@prothomalo.com
যেদিন গেছে সেদিন কি আর ফিরিয়ে আনা যায়!

করোনা–কালের এ সময়ের আগের যাপিত জীবন নিয়ে কত না অভিযোগ ছিল। দীর্ঘ যানজট, বাসের ভিড়—সবকিছু ঢেলে বাসায় ফিরে যাপিত জীবন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ছিল। আজ এই গ্রহণকালে সেই যাপিত জীবনই ফেরত চাই, তখন কখনোই ভাবিনি সে জীবন ছিল কত আশীর্বাদপুষ্ট!

১.
আপনি কী খান আর কী খান না? বিখ্যাত শেফ গ্যারি মেহিগান তাঁর কুকিং শো ‘Far Flung with Gary Mehigan’-এর ষষ্ঠ পর্ব ‘হংকং’-এ এক বাটি সাপের স্যুপ সামনে নিয়ে দর্শকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে এই এক বাটি স্যুপ, আমি কী খাই আর কী খাই না—এ সংক্রান্ত নৈতিকতাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে।

করোনা-কাল যেন আমাকে এই কথার উত্তর ছুড়ে দিয়েছে। করোনা–কাল আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে খাদ্য ব্যবস্থাপনায় যে পরিমিতিবোধ, তা ভুলে গেলে আমাদের চরম মূল্য দিতে হয়। খাদ্য নিয়ে আমাদের এই অদূরদর্শিতা নতুন নয়, এর আগে ব্যস্ত জীবনের দ্রুত সমাধান হিসেবে এসেছিল ‘জাংক ফুড’ যা স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগের মতো ব্যাধির সৃষ্টি করে আমাদের জীবনকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে গেছে।

২.
কর্মফল ও ভাগ্য—এই দুয়ের ফারাক না বুঝতে পারা। করোনা-কালে নিজস্ব বোধোদয়ের জায়গা থেকে একেকজন একেকভাবে সৃষ্টিকর্তাকে দেখছেন। কেউ ভাবছেন সৃষ্টিকর্তা তাঁর পৃথিবী ফেরত চেয়েছেন, আমাদের সীমা লঙ্ঘন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তিনি প্রার্থনাস্থল থেকেও আমাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছেন।

রোগমুক্তির জন্য কেউ কেউ কর্মফল ও ভাগ্য—এই দুয়ের ফারাককে গুলিয়ে ফেলছেন। কোন নিয়ম মানবেন না, কোন যুক্তি মানবেন না, তাঁরা বলেন যে সৃষ্টিকর্তা ভাগ্যে যা রেখেছেন, তাই হবে। তাঁরা কর্মফল ও ভাগ্য—এই দুয়ের সূক্ষ্ম ফারাকটা ধরতে পারেন না। মাস্ক না পরে অসুস্থ হলে তা হবে কর্মফল আর সব নিয়মাচার মেনে অসুস্থ হলে তা হবে ভাগ্য আর তা অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার বিধান।
আবার কেউ কেউ সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত ভাগ্যফল বা কর্মফল কোনোটাই ভাবিত না হয়ে, নীতিনৈতিকতার ধার না ধরে নিজের ভাগ্য গড়তে ব্যস্ত।
৩.
অবাক শহর ঢাকা। এ রকম ঢাকা শহরকে কখনো দেখিনি আগে! জনশূন্য রাজপথ, মানুষের মুখে মুখে মুখোশ, একজনের বাড়িয়ে দেওয়া হাতে কিছু গুঁজে দিতে গেলে দশজনের হাত বাড়িয়ে ছুটে আসা। জীবিকার প্রয়োজনে বের হয়ে ঘরে এসে নিজেকে হ্যান্ডওয়াশ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বৃত্তে বন্দী করা। হ্যান্ডওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের মাঝে যাপিত যে জীবন, সে জীবন থেকে আবার কি ফিরে যাওয়া যাবে সেই আগের জীবনে। নাকি পথের মাঝে পথ হারিয়ে তাকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না?

*লেখক: প্রিন্সিপাল অফিসার, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। matin.tuhina@gmail.com