আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, ২০ ঘরে আগুন
by মাদারীপুর প্রতিনিধিমাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের হাজির হাওলা গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হাওলাদার মটরস এর মালিক নুর আলম হাওলাদার (৩২) নামের এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে ওই ব্যবসায়ী ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এদিকে নুর আলমের মৃত্যুর খবর ঐ গ্রামে পৌঁছালে তার লোকজন রাতেই একই গ্রামের স্থানীয় আকতার বেপারীর লোকজনের প্রায় ২০টি ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কিছু ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। রাত থেকে ঐ গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত নুর আলম হাজির হাওলা গ্রামের আলাউদ্দিন হাওলাদারের ছেলে।
পুলিশ, পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হাজির হাওলা গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আকতার বেপারী, কালাম দারোগা গ্রুপের সাথে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস আহম্মেদ হাওলাদার ও জাকির হাওলাদার গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।
এ বিরোধের জের ধরে বুধবার দুই গ্রুপের লোকজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনা নিয়ে সালিশ হওয়ার কথা ছিল। সালিশের আগেই আকতার বেপারী ও কালাম দারোগার লোকজন বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে ইলিয়াস গ্রুপের সমর্থক ব্যবসায়ী নুর আলম হাওলাদারকে শহরের পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে তার দোকানে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে।
পরে দোকানের আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নুর আলমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত দেড়টার দিকে মারা যান।
এ খবর এলাকায় পৌঁছালে নুর আলমের লোকজন রাতেই আকতার বেপারীর লোকজনের প্রায় ২০টি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ বেশ কিছু ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। গ্রামে উত্তেজনা থাকায় রাত থেকে এখন পর্যন্ত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।
মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস আহম্মেদ হাওলাদার বলেন, আকতার বেপারীর লোকজন বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে ব্যবসায়ী নুর আলম হাওলাদারকে তার দোকানে বসে একা পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। রাতে নুর আলমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত দেড়টার দিকে মারা যান। নুর আলমের মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছালে কিছু লোকজন কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা চালায়। আমি লোকজনকে বলেছি কারো কোন বাড়িঘরে হামলা চালানো যাবে না। কোন মালামাল ক্ষতি করা যাবে না। আমরা এ হত্যার কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।
এই ঘটনায় অপর গ্রুপের আকতার বেপারীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায়, তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিস স্টোশন অফিসার মো. আমজেদ হোসেন জানান, রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আনতেই অনেক ঘর-বাড়ি পুড়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়েছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ বদরুল আলম মোল্লা বলেন, নুর আলম হত্যার ঘটনায় ঐগ্রামের প্রায় ২০/২৫ টি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেশ কিছু ফাঁকা গুলি করেছে। রাত থেকে এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের পর থেকেই আকতার বেপারীর লোকজন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে।