https://www.dhakatimes24.com/assets/news_photos/2020/05/29/image-168178.jpg

জামালপুরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আচরণে অতিষ্ঠ স্টাফরা

by

করোনার এই দুর্যোগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অশালীন আচরণ, মানষিক নির্যাতন, নানা ভয়ভীতি ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও কর্মচারিরা। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এ ধরণের আচরণ ও নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। সিভিল সার্জন বলছেন বিষয়টি তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।

দেওয়ানঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও কর্মচারীদের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ আবু আহাম্মদ শাফী দীর্ঘ দিন থেকে তাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, মানষিক নির্যাতন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন, রাতে কর্তব্য পালনকালেও নার্সদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। এছাড়া তাদের নামে বাসা বরাদ্দ না দিয়ে ভাড়া নিয়ে নিজেই আত্মসাত করে আসছেন। তার এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গেলে বহিরাগতদের দিয়ে নানা হয়রানি করার অভিযোগ করেন তারা। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অত্যাচার ও মানষিক এসব নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্সরা স্বাস্থ্য সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

https://www.dhakatimes24.com/templates/web-v1/images/eValy-4-4-2020.png

অভিযোগে বলা হয়, ডা. আবু আহাম্মদ শাফী ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। এরপর অকারণে স্টাফদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। মধ্যরাতে কর্তব্যরত নারী স্টাফদের কুপ্রস্তাব দিয়ে থাকেন। এছাড়া বহিরাগতদের নিয়ে মাদকসেবনের অভিযোগ করা হয় তার বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী নার্সরা দ্রুত তার বদলির দাবি জানান।

হাসপাতালের কর্মচারীরা বলেন, করেনার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে গেলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাদেরকে করোনা পরীক্ষার নামে ঘরে বন্দি করে রাখেন, নার্সদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, বহিরাগতদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট খায়রুল ইসলাম বলেন, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের ইউএইচও যোগদানের পর থেকেই স্টাফদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, যেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। একজন অফিসারের আচরণ এতো খারাপ হতে পারে, তা বিশ্বাসযোগ্য না। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার প্রতি সব স্টাফ অসন্তুষ্ট। তিনি এখানে কর্মরত থাকলে স্টাফরা কাজের আগ্রহ হারাবেন। তাই দ্রুত তাকে বদলির দাবি জানান খায়রুল।

নৈশ প্রহরী ফুল মিয়া বলেন, তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরও ডা. শাফী তাকে কয়েকধাপে হাসপাতাল কোয়ার্টারের একটি কক্ষে ২৪ দিন তালাবদ্ধ করে রাখেন। কোনো প্রতিবাদ করলেই স্টাফদের মারধর করেন তিনি। এই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন আয়া বলেন, ডা. শাফী প্রতি রাতে বহিরাগতদের নিয়ে হাসপাতালে আড্ডা দেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় নার্সদের নানাভাবে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছেন তিনি। এভাবে চলতে থাকলে হাসপাতালে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স জানান, তিনি ২৪ বছর যাবত স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি করছেন। তবে ডা. শাফীর মতো আর কাউকে তিনি দেখেন নাই। কোনো কারণ ছাড়াই তিনি নার্সদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। সুন্দর চেহারার নার্সদের কুপ্রস্তাব দিয়ে থাকেন। এছাড়া তিনি বহিরাগত নারী পুরুষদের সঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালে আড্ডা দেন। তিনি নিজের একটি বাহিনী তৈরি করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে সেই বাহিনী দিয়ে তাকে মারধর করান তিনি। সিনিয়র স্টাফ নার্সরা দ্রুত তার বদলি ও শাস্তির দাবি করেন। যদি তাকে দ্রুত বদলি না করা হয় তবে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তিনি।

এ বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ আবু আহাম্মদ শাফীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং বিষয়টি তদন্তাধীন তাই তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নার্স ও কর্মচারীদের অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে সিভিল সার্জন বলেন, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে অভিযোকারীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্তে অভিযোগ প্রামাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে বলে জানান তিনি।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নয়জন চিকিৎসক, ১৭ জন নার্স, ছয়জন ধাত্রীসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শতাধিক কর্মচারি কর্মরত রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯মে/কেএম)