চাকরি চলে যাওয়া যখন অনুপ্রেরণা

by

জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের ‘না’–এর মুখোমুখি হতে হয়, অনেক সময় অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবে এটি কোনো ধাক্কা নয়, এটি কোনো সিদ্ধান্তও নয় যে এই ‘না’ আপনি কে, কীভাবে নিজেকে সবার সেরা করে গড়ে ধরবেন সেটি নির্ধারণ করবে। চাকরি চলে যাওয়া, ব্যবসার মূলধন খুইয়ে ফেলা এগুলো হতেই পারে, তবে নিজেকে বিখ্যাত করে তুলতে এই ব্যাপারগুলো জীবনের সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে, যেমনটা চলেছেন বর্তমানে যাঁরা বিখ্যাত।
স্টিভ জবস: অস্বীকার করার কোনো প্রকার উপায় নেই যে জবস ছিলেন প্রযুক্তি দুনিয়ার অন্যতম সেরা আইকন। অথচ এই মানুষটিকেই ১৯৮৫ সালে অ্যাপলের পরিচালনা পর্ষদ অপসারণ করে। অন্তর্বর্তীকালীন আয়ের উৎস হিসেবে সফটওয়্যার সংস্থা নেক্সট চালু এবং পিক্সার নামে একটি অ্যানিমেশন স্টুডিও কিনে নিয়েছিলেন তিনি। দুটি কোম্পানির ঈর্ষান্বিত উত্থানের কারণে তাঁকে আবার ১৯৯৭ সালে অ্যাপলে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ফিরে এসে তিনি সর্বাধিক মূল্যবান পাবলিক ট্রেড সংস্থাগুলোর সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখপাত্রে পরিণত হয়ে ওঠেন। ২০০৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভাষণে জবস বলেছিলেন যে অ্যাপল থেকে দূরে থাকার এই সময়টা তাঁর জন্য আসলেই ভীষণ উপকারী ছিল। ‘এটা প্রমাণিত যে অ্যাপল থেকে বরখাস্ত হওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো ঘটনা হতে পারে। সফল হওয়ার পথে আমার যে পথচলা, এই সময়ের শিক্ষা সেখানে কাজে লেগেছে। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল সময়ে প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত করেছিল।’
ওয়ারেন বাফেট: এই গ্রহের অন্যতম ধনী পুরুষ ওয়ারেন বাফেট দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ের জগতে কাজ করে যাচ্ছেন। বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের অক্টোজেনেরিয়ানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাত্র ১১ বছর বয়সেই বিনিয়োগ শুরু করেছিলেন ওয়ারেন বাফেটের পেছনে। আপনি মনে করতে পারেন তাঁর ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ অংশই মসৃণ ছিল, তবে তা নিতান্তই ভুল। ১৯ বছর বয়সে তিনি তাঁর স্বপ্নের স্কুল হার্ভার্ডে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন, তবে অতি তুচ্ছ কারণেই তিনি ব্যর্থ হন।এই তুচ্ছ কারণটিকে তিনি বলেছিলেন তাঁর বয়স ১৯ বছর হলেও দেখতে ১৬ ও ইমোশনালি ৯ বছর ছিল এবং হার্ভার্ড তাঁর নিজের প্রকৃত সামর্থ্য ধরতে ব্যর্থ হয়েছিল সেই সময়। এরপর তিনি কলম্বিয়ায় চলে যান এবং সেখানেই তাঁর বিনিয়োগের বিস্তার ঘটে।
জ্যাক মা: মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রথম ব্যবসা করতে উদ্যত হয়ে ওঠেন তিনি। এর জন্য প্রথমে তিনি তাঁর বন্ধুদের সাহায্য আহ্বান করেন, কিন্তু ২৪ জন বন্ধুর ভেতর মাত্র একজন তাঁর সঙ্গে যোগ দেয়। প্রাথমিক অবস্থায় তাঁদের পেছনে কোনো সংস্থায় বিনিয়োগ করতে রাজি হয়নি। অগত্যা ১৮ জন সহপ্রতিষ্ঠাতাকে সঙ্গে নিয়ে জ্যাক মাকে আলিবাবা প্রতিষ্ঠা করতে হয় সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে। ১৮ জনের প্রত্যেকে ৫ লাখ আরএমবি করে বিনিয়োগ করেছিল সে সময়। তবে চীনের মতো এত বড় একটা জায়গায় এই টাকা নিতান্তপক্ষেই কম ছিল। কিন্তু অষ্টম মাসেই তাদের হাত খালি হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে তিনি আবার নতুন বিনিয়োগ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ান ও এশিয়ার অন্যতম সেরা উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হংকংয়ে অনুষ্ঠিত ‘অ্যান ইভিনিং উইথ জ্যাক মা’ অনুষ্ঠানে তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘আমার ইচ্ছে ছিল পুলিশ হব কিংবা আর্মিতে যোগ দেব। এমনকি কেএফসিতে কাজের জন্যও আবেদন করেছিলাম। ২৪ জন আবেদনকারীর মধ্যে ২৩ জনই নিয়োগ পেয়েছিল। ১ জন পায়নি—সেই মানুষটা আমি। যখন পুলিশের চাকরির জন্য আবেদন করলাম, প্রতি ৫ জনে ৪ জন চাকরি পেয়েছিল, আমি পাইনি। আলিবাবায় আমরা ১৮ জন মানুষ শুধু এটাই ঠিক করেছিলাম, আমরা আমাদের বিশ্বাসে অটল থাকব। নিঃসঙ্গ যাত্রা খুবই ক্লান্তিকর। নিজের কাজটা ঠিকভাবে করলেই একটা ব্যবসা দাঁড়িয়ে যায় না। এর জন্য একদল মানুষের মধ্যে একটা ভালো বোঝাপড়ার দরকার হয়।’
সাধারণ সম্পাদক, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা