‘ত্রাণ চাইনে, পানি সরানোর ব্যবস্থা করে দেও’
by নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা‘আমাগো ত্রাণ চাইনে, পানি সরানোর ব্যবস্থা করে দেও। পানিতে বন্দী থেকে ৮-১০ দিন রাস্তার ধারে কুঁড়েঘর বেঁধে নইছি। কেউ খোঁজখবর নেইনি।’
কথাগুলো বলছিলেন সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের আউলিয়া খাতুন। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে তাঁর বাড়ি ডুবে গেছে। এই এলাকার বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গৃহহীন হয়ে রাস্তার ধারে বসবাস করছে পানিবন্দী অর্ধশত পরিবার।
কালিকাপুর গ্রামের গৃহিণী মাহফুজা খাতুন জানান, খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে কালীগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর ও রঘুনাথপুর গ্রামের ৫০-৬০টি পরিবারের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁরা কালিকাপুর-কালীগঞ্জ সড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর রান্নাঘর, গোয়ালঘর ও শোবার ঘর সব ডুবে গেছে। বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে কুঁড়েঘর বেঁধে বসবাস করছেন।
আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের তালতলা হাট থেকে নদীর ধার পর্যন্ত ৫০-৬০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের বসতঘর, রান্নাঘর, হাঁস–মুরগি আর গোয়ালঘরসহ সবই পানিতে তলিয়ে গেছে। অর্ধশতাধিক মৎস্যঘের, খেতের সবজি তলিয়ে নষ্ট গেছে। ১০-১২ দিন ধরে তাঁরা কালিকাপুর রাস্তার ধারে খুপরি ঘরে বসবাস করছেন। রান্না করার জায়গা নেই। প্রস্রাব–পায়খানা করার মতো জায়গা নেই। পুরুষেরা আশপাশে গেলেও নারীদের সমস্যার শেষ নেই। কবে ঘরে ফিরতে পারবেন, তা–ও তাঁরা জানেন না।
কালিকাপুর গ্রামের কুমকুম বেগম বলেন, ‘খাবার পানি নিয়ে আসতেছি অনেক দূর থেকে। আর পারতেছি ন। খাবার পানি আনতে কষ্ট হইতেছে। আমাগো আর কিছু সরকারের দেওয়ার দরকার নাই। যেভাবে পারেন পানিটা সরাইয়ে দেন।’ গৃহিণী লতিফা বেগম জানান, তাঁর ছয়-সাতজনের সংসার। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। কেউ খোঁজ নেয়নি। সবকিছু তলিয়ে গেছে। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেও অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন।
একই গ্রামের ইউনুস আলী জানান, তাঁর তালতলা এলাকায় একটি স্টল দোকান ছিল। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ের পর থেকে দোকান খুলতে পারছেন না। আয়–রোজগার না থাকায় ছেলেমেয়ে নিয়ে জীবন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। গ্রামের বাসিন্দা রোকেয়া বেগম জানান, এভাবে যদি আর কিছুদিন পানিবন্দী থাকতে হয়, তাহলে লোনা পানির কারণে কাঁচা ঘরবাড়ি সব বিনষ্ট হয়ে যাবে। লোকজন পানিবাহী রোগে আক্রান্ত হবে।
কালীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী জানান, প্রাথমিকভাবে দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ তিন দিন কাজ করে রিং বাঁধ দেওয়ায় লোকালয়ে আর পান ঢুকতে পারবে না। তবে কয়েকটি পরিবার ওই পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাঁদের কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। দ্রুত পানি সরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।