বঙ্গবন্ধুর নামে নতুন প্রজাতির পলিকীট: নামকরণ বিষয়ে যা বললেন আবিষ্কারক

by

নোয়াখালীর হাতিয়া উপকূলের জলাভূমি থেকে সম্প্রতি আরেকটি নতুন পলিকীট প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেলের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) গবেষক ড. মো. বেলাল হোসেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি এর নামকরণ করেছেন ‘গ্লাইসেরা শেখমুজিবি' (Glycera sheikhmujibi)। বঙ্গবন্ধুর নামে নাম রাখায় সোশ্যাল মিডিয়াসহ অনেকেই সমালোচনা করছেন। এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিজ্ঞানী।

উল্লেখ্য, তাঁর এই সাফল্য যাত্রায় গবেষণার সঙ্গী হিসেবে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পলিকীট বিজ্ঞানী ড. প্যাট হ্যাচিংস। Glycera sheikhmujibi আবিষ্কারের পূর্বেও তিনি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে নেফটাইস বাংলাদেশি (Nephtys bangladeshi), নিউমানিয়া নোবিপ্রবিয়া (Neumania nobiprobia) ও অ্যারেনুরাস স্মিটি (Arrenurus smiti), এবং ব্রুনাইয়ের সমুদ্র এলাকা থেকে ভিক্টোরিয়োপিসা ব্রুনেইয়েনসিস (Victoriopisa bruneiensis) নামের আরো চারটি নতুন অমেরুদণ্ডী প্রজাতি আবিষ্কার করে বিশ্ব বিজ্ঞানমঞ্চে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। 

প্রাণিজগতের এনেলিদা (Annelida) পর্বের অন্তর্ভুক্ত এই হাল্কা গোলাপী বর্ণের অত্যন্ত ক্ষুদ্র ও নলাকৃতির নতুন প্রজাতির নামকরণ করেছেন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গর্বময় ভূমিকা ও গবেষণা ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনন্য অবদান চির স্মরণীয় করে রাখতে এই নামকরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান গবেষক ড.বেলাল।  

কিন্তু নতুন এই প্রজাতির নামকরণ বঙ্গবন্ধুর নামে করায় অনেকে না জেনে সমালোচনা আর বিতর্কের সৃষ্টি করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে, জানান ড. মো. বেলাল হোসেন। নতুন প্রজাতির নামকরণ ও সবার কিছু ভুল ধারণা প্রসঙ্গে এই আবিষ্কারক বলেন, একজন ট্যাক্সোনমিস্ট খুব সম্মান করে একজন ব্যক্তির নামে একটি নতুন প্রজাতির নামকরণ করে। অসম্মান করে নামকরণ নজির কোথাও নেই। এটি এক ধরনের ভালোবাসা বা উপহার। মেরুদণ্ডী বা অমেরুদণ্ডী দেখে না। পৃথিবীর ৯৭ ভাগ প্রাণী অমেরুদণ্ডী। যেহেতু ছোট, এদের আবিষ্কার তুলনামূলক কঠিন। আমেরিকাতে এমনও নিয়ম আছে একটা প্রজাতি কারো নামে করতে হলে ৫-১৫ হাজার ডলার দিতে হয় আবিষ্কারককে। আর আমি এই প্রজাতির জন্য অনেক খরচ করেছি। সময়, শ্রম ও মেধা তো আছেই। সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত প্রজাতিটি বঙ্গবন্ধুর নামে করেছি। এর কারণ সম্পর্কে আগেই বলেছি। বিস্তারিত আর্টিকেলে দেওয়া আছে। না পড়ে দয়া করে নিজেও ভুল বুঝবেন না, অন্যকেও ভুল বোঝাবেন না। কীট বা পলিকীট মানে চুল, পলি মানে অনেক। অতএব পলিকীট হলো যাদের দেহে অনেক চুল থাকে। নীচে দেখুন যেসব বিখ্যাত মানুষের ( Nelson Mandela/ Obama/Regan/Lincoln/ বিল গেটস্) নামে অমেরুদণ্ডী প্রাণি/কীটের নামকরণ করা হয়েছে। আমরা কেউ এতদিন পারিনি। আমি চেষ্টা করেছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন আবিষ্কারের নাম যেমন,
প্রেসিডেন্ট/রাজা/প্রতিষ্ঠাতা/জাতির জনকদের নামে Anelosimus nelsoni- Nelson Mandela,  Mandelia Valdés & Gosliner, 1999- Nelson Mandela,  Munidopsis mandelai- Nelson Mandela, Lincolna Girault, 1940- Abraham Lincoln, Heterospilus reagani- Ronald Reagan, Heterospilus washingtoni -George Washington, Arianops clintoni -Bill Clinton, Paragordius obamai- Barack Obama, Aptostichus barackobamai-Barack Obama,Baracktrema obamai- Barack Obama, Desmopachria barackobamai-Barack Obama, Lasioglossum obamai- Barack Obama,Agathidium bushi- George W. Bush,Neopalpa donaldtrumpi- Donald Trump, Arianops carteri -Jimmy Carter, Kingnites diamondi- King Diamond। 

ধর্মীয় নেতাদের নামে আছে Aegomorphus wojtylai-Pope John Paul II Wojtyła, Buddhaites Diener 1895- Buddha, Dalailama Staudinger, 1896- Dalai Lama। 

সাংবাদিকদের নামে Acisoma attenboroughi - Invertebrate- David Attenborough, National treasure UK(on his 90 th Birth day)। 

কবি ও লেখকদের নামে Goetheana shakespearei- William Shakespeare Homeryon- Homer। 

বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদদের নামে Arcticalymene jonesi- Steve Jones, Eristalis gatesi- Bill Gates।

শিল্পীদের নামে আছে Mesoparapylocheles michaeljacksoni - Michael Jackson, Aleiodes gaga- Lady Gaga, Aleiodes shakirae- Shakira, Aptostichus angelinajolieae -Angelina Jolie, Echiniscus madonnae- Madonna।

এছাড়াও খেলোয়াড়দের নামে Eulaema quadragintanovem- Ronaldinho নামকরণ করা হয়েছে।

এসব উদাহরণ টেনে বিজ্ঞানীর অনুরোধ, না জেনে দয়া করে নিজেও ভুল বুঝবেন না এবং অন্যকেও ভুল বোঝাবেন না।