ইতিহাসে যোগ হলো ব্যালকনি
by আবদুস শহীদব্যালকনির ইতিহাস নতুন মাত্রা যোগ করেছে করোনা মহামারিতে। ইতালির ব্যালকনিগুলো পৃথিবীজুড়ে খ্যাতি পেয়েছে। পপ গানের ছাত্র-শিক্ষক মিলে ড্রাম ও গিটার সমন্বয়ে শুরু করে গানের উৎসব। পপ গানের শিল্পী ওয়াকার বাওয়ার্স দাবি করেন ইতালির ব্যালকনিগুলো ইংল্যান্ডের বাকিংহাম প্রাসাদের ব্যালকনি থেকেও অনেক উন্নত মানের। সেই ব্যালকনি থেকে তাঁরা গান গেয়েছেন ‘হালেলুইয়া হালেলুইয়া করোনাভাইরাস’; অর্থাৎ ‘হে ইশ্বর করোনা থেকে আমাদের মুক্ত কর।’
লকডাউন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পেরে অনেকেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই অবসাদ কাটিয়ে উঠতে তাঁরা নেমে পড়েন ব্যালকনি মিউজিকে। তাঁদের গানে আসে সান্ত্বনার সুর। তাঁদের সব গানেই ছিল উজ্জীবনের সুর।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রীতিমতো দখল করে ভাইরাল হয়েছিল ব্যালকনির এই সুর। কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে ড্রোন উড়িয়ে অনুকরণ করে মিউজিক ভিডিও তৈরি করেছিলেন। অনেকেই শনিবারের দুপুরে কিংবা সন্ধ্যায় গানের সুর তুলেছেন ফ্রন্ট লাইনে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের সম্মানার্থে। তাঁদের সঙ্গে সুরে মিলিত হয়েছেন বিখ্যাত ইতালিয়ান পপ সংগীত শিল্পী আদ্রেয়ানো কালেন্তানের ও আজুরো।
বিপর্যস্ত ইতালিতে লকডাউনের শুরুর দিনগুলোর কথা—রোম শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে তখনো আতঙ্ক ভর করতে পারেনি। নিজেদের বাড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গিটার ড্রাম বাজিয়ে তারা শুরু করে সংহতির সুর। কারও করও ব্যালকনিতে দেখা গেছে—‘সব সেরে যাবে’ লেখা প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন। সব ঠিক হয়ে যাবে—এই আশায় বুক বেঁধে গান গেয়ে তারা মানুষকে সান্ত্বনা দিতে থাকে। কিন্তু যখন লকডাউনের তিন সপ্তাহ অতিক্রম করে, তখন পরিস্থিতি পাল্টে গেল। পাল্টে গেল গানের সুর। ক্ষুধা আর দারিদ্র্য জেঁকে বসল সেখানে। গানের সুর হয়ে গেল বেসুরো। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য ক্রমেই বাড়তে লাগল। ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোতে উঠে এল ইতালির তখনকার বাস্তবতা। থেমে গেল সব গান।
দেশের বিভিন্ন দরিদ্র অঞ্চলে বেড়ে গেল সহিংসতা। মানুষ তখন উপলব্ধি করছে সবকিছু আগের মতো নেই। নাপোলি শহরের ধর্মযাজক সালভাতর বেসোলু বললেন, ইতালিবাসী আর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গান গাইছে না। তারা ভীত হয়ে গেছে। এই ভীতির কারণ শুধু ভাইরাস নয়, দারিদ্র্য, যা তাদের জেঁকে ধরেছে।
পরে ইতালির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যালকনি মিউজিকে উৎসাহিত হয়ে রাশিয়ার একদল শিল্পী বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নেমে এলেন ব্যালকনিতে। রাশিয়ান পপ অ্যাক্ট ক্রিম সোডার; ক্রাইং ইন টেকনো—গানে গানে পা মেলালেন বিশেষ ধরনের জুতোর সাহায্যে। শহরের প্রায় সব ব্যালকনিতেই দেখা গেল এই নাচের দৃশ্য। উদ্দেশ্য একটাই—করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া।
ইকুয়েডরের এক শিল্পী ব্যালকনিতে নেমে পড়লেন গিটার নিয়ে। গান গেয়ে মানুষকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, করোনাকে ভয় না পেতে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর গানটি ভাইরাল হয়ে গেল টিভি, রেডিওসহ সব মিডিয়ায়। ওই শিল্পী প্রচার পেলেন রাতারাতি। এর পর করোনাভাইরাসকে দেশছাড়া করতে এ নিয়ে ভজন গাইলেন ভারতীয় নারীরা। তবে ব্যালকনিতে নয়। তাঁরা গাইলেন ড্রয়িং রুমের মেঝেতে বসে। তাঁরা গাইলেন, ‘করোনা তু ভাগ যা/ কিয়া কাম তেরা ভারতমে।’ গানের কথা হয়তো করোনা বুঝল না। এ কারণেই ক্রমে ভারতজুড়ে সে জেঁকে বসল। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গান লিখলেন, সচেতনতার গান। সুরও করলেন তিনি নিজে। গানটি গাইলেন প্রতিমন্ত্রী তথা গায়ক ইন্দ্রনীল সেন। ‘করোনাকে ভয় পেয়ো না’ শীর্ষক সে গানে রোগটি থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কথাও বলেছেন তিনি। তবে গায়ক ইন্দ্রনীল সেন গানটি ব্যালকনিতে বসে গেয়েছেন কিনা জানা যায়নি।