ব্যক্তিগত সতর্কতাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন
পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে
প্রায় দুই মাস পর ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। ছুটির মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে দোকানপাট এবং অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য খুলেছে; রাস্তাঘাটে ও জনপরিসরে লোকসমাগম বেড়েছে। কার্যকর লকডাউন এখন আর কোথাও নেই। ছুটি শেষ হওয়ার পর অফিস-আদালত খুললে লোক চলাচল আরও বাড়বে।
অন্যদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার পেরিয়ে গেছে; প্রতি ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার বাড়তে বাড়তে ২১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ছাড়িয়েছে, মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪৪।
শুধু তা–ই নয়, সংক্রমণ বৃদ্ধির এলাকাগুলোও দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ইত্যাদি উচ্চ হারে সংক্রমিত জেলাগুলোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জেলা শহরে পাড়ায়-মহল্লায় সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। গাজীপুরে নতুন করে ৬১ জন সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এক দিনে বগুড়ায় ৫০ জন ও লক্ষ্মীপুরে ৩৭ জন সংক্রমিত হয়েছেন। বরিশাল, ময়মনসিংহ, ফেনীসহ আরও অনেক এলাকা থেকে সংক্রমণ বাড়ার খবর আসা অব্যাহত আছে।
পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই বলে আসছেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী ধারা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে। তবে সেটা ছিল লকডাউন চলমান থাকা সময়ের অনুমান। ইতিমধ্যে লকডাউন কার্যত উঠে গেছে এবং জনপরিসরে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার ব্যাপক ব্যত্যয় ঘটে চলেছে। নতুন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি কী মাত্রায় বেড়েছে এবং আরও বাড়বে, এবং তার ফলে সংক্রমণের সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছতে আরও কত সময় লাগতে পারে, এসব বিষয়ে এখনই অনুমান করা বিশেষজ্ঞদের পক্ষেও দুরূহ হবে। তবে কোনো সংশয় নেই যে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। সেই পরিস্থিতি আমরা কীভাবে মোকাবিলা করব, এখন সেটাই ভেবে দেখার বিষয়।
প্রথমত, অর্থনীতির আরও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো এবং জনসাধারণের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় আয়-রোজগারের স্বার্থে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবার শুরু করার বিকল্প যখন আর নেই, তখন আমাদের দেখতে হবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতেই সংক্রমণ ন্যূনতম মাত্রায় সীমাবদ্ধ রাখা এবং আক্রান্তদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে কী কী কৌশল অবলম্বন করা যায়। সংক্রমণ যাতে আর না বাড়ে, সে লক্ষ্যে সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো এই নতুন পরিস্থিতিতে আরও কী কী ব্যবস্থা নিতে পারে। গণপরিবহন ‘সীমিত’ আকারে চালু করার বিষয়টি কীভাবে কার্যকর হবে, তা পরিষ্কার নয়। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের ব্যক্তিগত সচেতনতা ও সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেড়ে গেছে। এখন প্রত্যেককে জীবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে প্রধানত নিজেকেই। গণপরিবহনে ও জনপরিসরে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক ব্যবহার করা, মোট কথা, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলায় গাফিলতি নিজের জীবনকেই বিপন্ন করতে পারে—এই সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা সবার থাকতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সরকারকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার পরিধি ও সক্ষমতা আরও ব্যাপকভাবে বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে, কেননা প্রতিদিনই নতুন নতুন করোনা রোগী যুক্ত হচ্ছেন। করোনা হাসপাতালের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে, সেগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে; সর্বোপরি, চিকিৎসক, নার্সসহ লোকবল আরও বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার দিকেও এখন বাড়তি নজর দেওয়া জরুরি।