জীবনকে সহজ করেছে মোবাইলের যে ব্যবহারগুলো
by আল সানিপৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস এখন মোবাইল ফোন। মোবাইল এখন পৃথিবীর প্রায় ৭০ মানুষের হাতেই পৌছে গেছে, অনেকের হাতে একাধিকও আছে। তবে মোবাইলে কথা বলা ও ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ প্রধান কাজ বলে বিবেচিত হলেও আরো কাজ করার মাধ্যমে মোবাইল ফোনের ব্যবহারকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে এর ব্যবহারকারীতা। এ রকম সাতটি টি কাজ নিয়ে আজকের আয়োজন:
নাগরিক সাংবাদিকতা
একজন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী সারাজীবন মোবাইলের যতোগুলো ফাংশন ব্যবহার করে তা সব ফাংশনের ১% এরও কম। এখন অবশ্য এই ব্যবহারের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তথ্য ঘেটে দেখে, ক্যামেরা ব্যবহার করে, গান শোনে ইত্যাদি। স্মার্ট মোবাইলগুলোতে শক্তিশালী ক্যামেরাতে খুবই ভালো ছবি ও ভিডিও নিতে পারে। যার মাধ্যমে সারা বিশ্বের প্রত্যেকেই সাংবাদিক হয়ে উঠছে। হডসন বিমান দুর্ঘটনা, মধ্য প্রাচ্যের বিপ্লব বা বিশ্বব্যাপী আরও অনেক ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত লোকেরা তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ধারণের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে প্রকৃত খবর তুলে ধরেছিলেন। সিএনএনেরর একটি পোর্টাল রয়েছে যেখানে তাদের দর্শকদের ধারণকরা খবরগুলো গৃহীত হয় এবং সারাবিশ্বে সম্প্রচারিত হয়। এ ছাড়াও পৃথিবীর বড়ো বড়ো মিডিয়া হাউসগুলোও এই ধারণাটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে এবং নাগরিক সাংবাদিকতায় অনেকেই যোগ দিয়েছে। এমপোর্টার, পেরিস্কোপ, মিরক্যাট এবং আরও অনেকগুলো অ্যাপ রয়েছে যা মোবাইল থেকে সরাসরি স্ট্রিমিংয়ের অনুমতি দেয় এবং এভাবে বিশ্বকে প্রকৃত সংবাদ ও অথ্য প্রদানে সহায়তা করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা, ভূমিকম্প বা যে কোনো দুর্ঘটনা বা কোনও প্রতিবাদ সব কিছু প্রচারের জনপ্রিয় মাধ্যম এখন মোবাইল ফোন।
২.দাতব্য সংস্থার কার্যক্রম
গুগলের মতো বড় সংস্থাগুলো থেকে শুরু করে সারা বিশ্বের ছোট ছোট প্রকল্পগুলোতে সাহায্য আহ্বান ও প্রদানের ক্ষেত্রে মোবাইল ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক গ্রুপ আছে যেগুলো সম্পূর্ণ অলাভজনক কাজ করে থাকে। তারা সদস্য সংগ্রহ, ফান্ডিং সব কাজের ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশে এ রকম কয়েক হাজার সংস্থা আছে। এক টাকার আহার, বিডি ক্লিন, প্যারেন্টস এজিং ফাউন্ডেশন, সোনারতরী ফাউন্ডেশন ইত্যাদি।
৩. ভোটিং ও পুলিং
দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নাগরিকদের মতামত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়া পোলিংয়ের আয়োজন করে থাকে। সেসব মতামত নিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা সমালোচনা করে ফলে একটি জীবনমুখি সিদ্ধান্ত আসতে পারে সবাই। এসব পোলিং ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৪. ই-গভর্নেন্স
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একটি শহর বা এলাকার বাসিন্দাদের সাথে সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা অনেক সহজ হয়েছে। পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় প্রশাসনের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। এটি লোককে অনেক সময় সাশ্রয় করে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি তাদের জন্য এমনকি সরকারের জন্যও খুব সুবিধাজনক করে তোলে। বিদ্যুৎ, পানির বিল, ট্যাক্স দাখিল ইত্যাদি কাজ মোবাইল ব্যাংকিং অতি সহজলভ্য করে তুলছে ক্রামাগত। এতে সরকারি লোকবল ও কাগজের ব্যবহার হ্রাস করে ফলে পরিবেশও বাঁচে এবং সরকারী সংস্থাগুলোতে কম অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয়।
৫. গ্রাম বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করা
বিশ্বের অনেক দেশের পাহাড়ি ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও ক্যাবল নেটওয়ার্ক সেভাবে পৌছায়নি।কিন্তু মোবাইলে সেখানে অতিদ্রুতই পৌছে গেছে। এই জায়গাগুলোতে বসবাসকারী লোকেরা কেবল তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে এবং কেবলমাত্র এই ডিভাইসগুলোর মাধ্যমেই লেনদেন বিনিময় এবং তথ্য গ্রহণ ও প্রেরণ করে থাকে।
৬. মুক্ত শিক্ষা পরিচালনা
শিক্ষার বৃহত্তর ক্ষেত্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে। শিশুরা পড়াশোনা করতে চাইলেও উন্নয়নশীল অথবা অনুন্নত দেশগুলোর স্কুল ও শিক্ষকদের পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। এই দুর্গম অঞ্চলে, মোবাইল ফোনগুলো শিক্ষার একমাত্র উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের পার্বত্য জেলারগুলোর বেশ কিছু জায়গায় মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
৭. ব্যাংকিং সুবিধা
আফ্রিকা ও এশিয়ার স্বল্পউন্নত দেশগুলোতে মানুষের জীবনযাত্রার ধরনকে বদলে দিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা। এই লোকগুলোর অনেকেই কখনও কোনও ব্যাংকে যায়নি অথবা তাদের কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই তবে তারা তারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ এবং গ্রহণ করে থাকে। এটি এখন সরকারের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম বড় উৎস। অধিকাংশ এশিয়ান ও আফ্রিকানদের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম মোবাইল ওয়ালেটে পরিণত হতে চলছে।
স্রেফ কলিং এবং টেক্সটিংয়ের চেয়ে আরও বেশি কীভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে ক্রমাগত গবেষণা করে চলছে। এ সব উদ্ভাবনী ব্যবহারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে মোবাইলই হয়ে উঠবে পৃথিবীর সবচেয়ে সহজলভ্য ও আরামদায়ক যন্ত্র। এর চেয়েও অবিশ্বাস্য বিষয়টি হল মোবাইলের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি কার্যক্রম পরিচালনা করে চলছে এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো।
*লেখক: শিক্ষার্থী সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা