পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর নিচে পদ্মার চর জনশূন্য
by ইমরোজ খোন্দকার বাপ্পি, পাবনাপ্রাচীন জেলা পাবনার রয়েছে নানান ঐতিহ্য। শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ও দক্ষিণ কোণে ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। পাশেই লালন শাহ সেতু। দুটি সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদী। এখানকার উপভোগ্য নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে ভ্রমণপ্রেমীদের সময় কাটে। বিশেষ করে ঈদ উৎসবে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবার সেই আনন্দ ম্লান। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা পদ্মার চর চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। জনসমাগম যেন না হয় সেদিকে কড়া নজরদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন তারা।
ছুটির দিনে একটু প্রশান্তি ও চিত্তবিনোদনের আশায় নানান শ্রেণিপেশার মানুষ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর কাছে আসে। ঈদের সময় কমপক্ষে সাতদিন থাকে জনসমাগম। পাবনাসহ আশপাশের বিশেষ করে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, নাটোর, তাঁড়াশ, সিরাজগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলার দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। মানুষের ভিড়ে এখানে পা ফেলা মুশকিল হয়ে পড়ে। কেউ আসেন বেড়াতে, কেউবা পিকনিক করতে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে আনন্দ উদযাপন।
এবারের ঈদের দিন কমপক্ষে অন্তত দুই হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানতে পেরে দ্রুত জনসমাগম বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ঈদের পরদিন সকাল থেকেই তাদের অবস্থান দেখা যায়। ঈদের পরদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থানকালে পুলিশ দর্শনার্থীদের অনেকদূর থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর চারদিকের কয়েকটি স্থানে পুলিশের বিশেষ পাহারা বসানো হয়েছে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, সিএনজিসহ সব ধরনের যানবাহন প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা হিসেবে কাউকে সেখানে অবস্থান করতে দেওয়া হচ্ছে না।
পদ্মার চরে ও উপরিভাগে ছোটবড় শতাধিক দোকানপাটের পসরা বসে। ঈদের সময় বেচাকেনা বেশ জমে ওঠে। করোনার কারণে এবার এই স্পট বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়া বিভিন্ন পেশার মানুষের শতাধিক পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে প্রতিদিন কয়েকশ’ মানুষ বিভিন্নভাবে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। হোটেল-রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান, কফি শপ তো আছেই। এছাড়া দুপুর থেকে ঝালমুড়ি, ফুসকা, আইসক্রিম, কোমল পানীয়, বাদাম, ছোলা, বুট, টক-ঝাল-মিষ্টি চানাচুর, ফুটপাতে খেলনা সামগ্রী বিক্রি হয়। করোনাভাইরাসের কারণে আপাতত সব বন্ধ। এ কারণে পথে বসেছেন নিম্ন-আয়ের মানুষ। তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহŸান জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
কয়েকজন ভাসমান দোকানদারের কথায়, ‘এখানে খাবারসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে এসেছি। আমাদের ফুটপাতে বসলেও মৌসুমি নই। সারাবছর এখানে ব্যবসা করি। কিন্তু করোনার কারণে সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের অতিকষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।’
দুই সেতুর মাঝখানে পদ্মার পাড়ে থাকে ছোট ছোট অসংখ্য নৌকা। নৌকায় চড়ে মাঝনদীতে ভ্রমণ উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা। করোনার কারণে ঘাটে একটি নৌকাও নেই। ডাঙায় বসে মাঝি আব্দুল রফিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সব নৌকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে এখানে দর্শনার্থীরা আসতে না পারায় আমরা যারা নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি, আজ সবাই কর্মহীন। এ কারণে দুই বেলা ভাত জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
নগরবাড়ি কাশিনাথপুর থেকে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু দেখতে এসেছিলেন কয়েকজন ভ্রমণপিপাসু। রুপপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে তারা দাবি করেন, করোনাভাইরাসের কারণে পদ্মার চরে আসা যে বারণ, তা নাকি তাদের জানা ছিল না। একই অবস্থা বনপাড়ার কামরুল, তাঁড়াশের জিয়া, ভেড়ামারার কাওছার, পাবনা শহরের জসিম, খালেদ, মিরাজ, বনগ্রামের আবেদ, কুষ্টিয়ার শিশিরসহ কমপক্ষে ২৫ জনের। ঈদের পরদিন বেড়াতে এসেছিলেন তারাও। কেউই নাকি জানতেন না দুই সেতু ও চরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। শেষমেষ ব্যারিকেড থাকায় সবাই ফিরে গেছেন।
পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ যেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হয় সেজন্য নমনীয়ভাবে বোঝাচ্ছি, তাতে কাজ না হলে কঠোর হতে হচ্ছে। কিছু মানুষ প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করলেও তাদের নিয়ম মেনে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে সবশ্রেণির মানুষ বেড়াতে এলেও ফিরে যাচ্ছে।’