ছয় কারণে ভারতের প্রতি চড়াও চীন
by আন্তর্জাতিক সময় ডেস্কবেশ কিছু দিন ধরে হঠাৎ করেই ভারতের প্রতি চড়াও হয়েছে প্রতিবেশি দেশ চীন। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিন বিরোধ রয়েছে। মাঝে মাঝে দেশ দু’টির মধ্যে চড়াও হওয়ার ঘটনা দেখা যায়। তবে এবার ভিন্ন মাত্রা দেখা যাচ্ছে। ভারতের কাছাকাছি বিমানঘাঁটি বানানোটা এবারই প্রথম।
তাছাড়া করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্ব যখন টালমাটাল তখন কেন চীন আগ্রাসী তা নিয়ে চলছে চুল চেরা বিশ্লেষণ। ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল সৌমিত্র রায় মনে করেন, ছয় কারণে চীন এবার ভারতের ওপর চড়াও হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় তিনি পাঁচটি কারণ উল্লেখ্য করে একটি কলাম লিখেছেন। কর্নেল সৌমিত্র রায়ের কলাম থেকে নির্বাচিত অংশ সময় নিউজের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো;
“চীনের লক্ষ্য একটাই, ভারতের ওপরে প্রবল চাপ তৈরি করা। কারণগুলোয় একটু চোখ রাখা যাক।
প্রথমত, চীন এই মুহূর্তে প্রবল চাপে রয়েছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। গোটা পৃথিবীতে এখন করোনাভাইরাসের প্রকোপ। এই ভাইরাস চীনের উহান থেকেই ছড়িয়েছে বলে আন্তর্জাতিক শিবিরের বিরাট অংশের দাবি। উহানের ল্যাবে কোনও দুর্ঘটনা থেকেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ল কি না, ওই ল্যাবে আসলে ভয়ঙ্কর জীবাণু অস্ত্র তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছিল কি না; সে সব তদন্ত করে দেখার দাবি উঠছে। এই পরিস্থিতি চীনের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর। ভারত যাতে এই আন্তর্জাতিক তোড়জোড়ের শরিক না হয়, তা নিশ্চিত করতে চায় চীন। তাই সীমান্তে পরিস্থিতির উত্তাপ বাড়িয়ে ভারতকে চাপে ফেলার চেষ্টা শুরু করেছে।
দ্বিতীয়ত, তাইওয়ান এবং হংকং নিয়েও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চাপ বাড়ছে চীনের ওপরে। চীনা শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে উঠেছে হংকংয়ে। তাইওয়ান বিতর্কে চীন কিছুটা কোণঠাসাই। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঘনিয়ে ওঠা এই অশান্তিতে ভারত যদি তাইওয়ান এবং হংকং-এর বিক্ষোভকারীদের পক্ষ নেয়, তা হলে চীনের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে। তাই ভারতকে উত্তর সীমান্তে ব্যস্ত রাখার কৌশল নেওয়া হচ্ছে।
তৃতীয়ত, বাণিজ্য এবং অর্থনীতি নিয়েও সমস্যা বাড়ছে চীনের। আমেরিকার সঙ্গে চীনের শুল্ক যুদ্ধ চরমে পৌঁছেছে। তাতে আমেরিকারও লোকসান হচ্ছে। কিন্তু চীনকেও খুব বড় বাণিজ্যিক সঙ্কটের মুখে পড়তে হচ্ছে। আর চিনের সে সঙ্কট শুধু আমেরিকার সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যেও সীমাবদ্ধ থাকছে না। বিশ্বের বৃহত্তম বাজারগুলির অন্যতম যে ভারত, সেখানেও চীনা পণ্যের রমরমায় রাশ টানার ভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় বাজারে চীনা পণ্যের অবাধ প্রবেশও কিছুটা কঠিন করে তুলেছিল ভারত। চীন এখন তার প্রতিশোধও নিতে চাইছে।
চতুর্থত, করোনা সংক্রমণের নেপথ্যে চীনের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর থেকে অনেকগুলো বৃহৎ বহুজাতিক সংস্থা চীন ছাড়তে উদ্যত। তেমন পরিস্থিতি হলে ভারতও যেন প্রস্তুত থাকে, সে বিষয়েও তৎপর নয়াদিল্লি। কিন্তু এই পরিস্থিতি কিছুতেই তৈরি হতে দিতে চায় না চীন। নিজেদের দেশ থেকে বিনিয়োগ বেরিয়ে যাওয়া চীনের জন্য যত বড় ধাক্কা, সেই বিনিয়োগ ভারতে ঢোকা তার চেয়েও বড় ধাক্কা। সুতরাং ভারতের সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি করে রাখা এখন চীনের পক্ষে খুব জরুরি। যাতে কোনও বড় বিনিয়োগকারী চীন ছাড়লেও ভারতে পা না রাখেন।
পঞ্চমত, চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র পাকিস্তান ক্রমশ আরও বেশি করে বিপন্ন বোধ করতে শুরু করেছে। জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার এবং সে রাজ্যকে ভাগ করে দিয়ে দুটো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার সিদ্ধান্ত যে দিন নিয়েছে ভারত, সে দিন থেকেই পাকিস্তানে চাঞ্চল্য তৈরি হয়ে গিয়েছে। ঘনিষ্ঠ মিত্রের আতঙ্ক কমাতে চীন ময়দানে নামল এ বার। আকসাই চীন এবং লাদাখকে ভাগ করে রেখেছে যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি), তা পেরিয়ে কয়েক কিলোমিটার করে ঢুকে আসতে শুরু করল চীন। যাতে আপাতত চীনকে সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে ভারত এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে আপাতত ভাবতেই না পারে।
ষষ্ঠত, শুধু পাকিস্তান নয়, পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে ভারত যা ভাবছে, তাতে চীনের অস্বস্তিও বাড়ছে। চীনের শিনচিয়াং প্রদেশের কাশগড় থেকে শুরু হওয়া চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর ওই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বাল্টিস্তান হয়েই পাক পঞ্জাব, সিন্ধ হয়ে বালুচিস্তানের উপকূলে পৌঁছে গ্বাদর বন্দর পর্যন্ত গিয়েছে। ভারত যদি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অভিযান চালায়, তা হলে চীনের তৈরি করা ওই অর্থনৈতিক করিডর তথা মহাসড়কও বিপন্ন হবে। কাশগড়ের সঙ্গে গ্বাদরের সড়ক যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যাবে। সুতরাং ভারতকে এখন অন্য সীমান্তে ব্যস্ত রাখার কৌশল নিচ্ছে চীন।