আদালতে জবানবন্দি

ভাড়াটে খুনি দিয়ে প্রকৌশলী দেলোয়ারকে হত্যা করেন সহকর্মী সেলিম

by

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (গাসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে খুনের দায় স্বীকার করেছেন তারই সরকারি একই অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম। আজ বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন।

৫ দিনের রিমান্ড শেষে সেলিমকে বুধবার সকাল ১১টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার জবানবন্দি ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। পরে মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান তার খাস কামরায় জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।

গত ১২ মে ভোরে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের লাশ তুরাগ থানা এলাকার বেড়িবাঁধের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। দেলোয়ার গাজীপুর কোনাবাড়ি এলাকার দায়িত্বে ছিলেন। আগের দিন ১১ মে তিনি অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে হার ফেরেননি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। একদিন পর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। পরে তুরাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।

তদন্তকালে পুলিশ প্রকৌশলী সেলিমসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। অন্য দুজন হলেন দিনমজুর পরিচয়দানকারী শাহীন ও গাড়িচালক হাবিব। এই দুই জনেই গত ২১ মে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে দেলোয়ারকে হত্যার কাহিনী বর্ণনা করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, প্রকৌশলী মো. সেলিম একই অফিসে কাজ করেন। তিনি জবানবন্দিতে জানান, খুনের পরিকল্পনা তিনি নিজেই করেছেন। অফিসের বস দেলোয়ারের সঙ্গে তার ঝামেলা ছিল। কৌশলের কারণে তিনি এসব ঝামেলার কথা বর্ণনা করেননি। তবে তিনি বলেছেন বসকে খুনের পরিকল্পনা করে তিনি এলাকার ছিনতাইকারী শাহীনের সঙ্গে কথা বলেন। গাড়িচালক হাবিবের সঙ্গেও কথা বলেন। ঘটনার দিন সকালে হাবিবের একটি মাইক্রোবাস নিয়ে এই তিনজন ঢাকার মিরপুরে নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ারের বাসার সামনে যান। একজন রিকশাওয়ালার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন নিয়ে দেলোয়ারকে নিচে আসতে বলেন। দেলোয়ারকে নিয়ে নিয়মিত যে গাড়ি যাতায়াত করতেন ওই গাড়ি আসতে আগেই নিষেধ করেন সেলিম। এরপর দেলোয়ার নিয়ে এলে তিনি মাইক্রোবাসে ওঠেন। সহকর্মী সেলিম ওঠেন। পেছনের সিটে বসা ছিলেন দেলোয়ারের ভাড়া করা খুনি শাহীন। মিরপুর থেকে গাড়ি ছেড়ে বেরিবাঁধ চলতে থাকে। করোনার এই সময়ে রাস্তা জনমানব শূন্য হওয়ায় গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়াবাড়ি রোডে নিয়ে যান। ফাঁকা স্থানে গিয়ে তিনজনে মিলে দেলোয়ারের গলায় রশি পেঁচিয়ে তাকে খুন করেন। পরে লাশ তিনজন মিলে গাড়ি থেকে বের করে রাস্তায় ফেলে রেখে মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যান।

সেলিম স্বীকারোক্তিতে আরো জানান, আগে থেকেই পরিকল্পনা কড়াই তারা রশি ও ছোরা নিয়ে আসেন। সহকারী প্রকৌশলী সেলিম অতি চতুর হওয়ায় ঠিক কি কারণে দেলোয়ারকে খুন করা হলো তার বিস্তারিত বর্ণনা করেননি। দেলোয়ারকে খুন করে ফেলে দেওয়ার পর শাহীনকে শাহীনকে ৫০০০ টাকা ও হাবিবকে ১২০০০ টাকা দিয়েছিলেন বলে স্বীকারোক্তিতে জানান। জবানবন্দি শেষে প্রকৌশলী সেলিমকে কারাগারের পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।