লকডাউন শিথিল মানে অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরি করা নয় : তথ্যমন্ত্রী

by

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জনগণকে যতদূর সম্ভব ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, অদৃশ্য একটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করছি। আমার সুরক্ষা আমার কাছে। এটি যদি অনুধাবন করতে না পারি আরেকজনকে তো জোর করে সুরক্ষা দেওয়া কঠিন। লকডাউন শিথিল করা মানে এই নয় অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরি করবো, অকারণে বের হবো, জনসমাগম করবো।

তিনি বলেন, অহেতুক ঘর থেকে বের হয়ে ঘোরাঘুরি করায় করোনা রোগীর সংখ্যা ইতিমধ্যে বেড়েছে। সবাইকে চিন্তা করতে হবে আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশ। এখানে জীবন জীবিকা দুটিই রক্ষা করতে হবে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যেখানে এখনো ডজন ডজন মানুষ প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করছে সেখানেও অনেক জায়গায় লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। আমার সুরক্ষা যদি আমি না নিই তাহলে কাউকে তো জোর করে নেওয়ানো সম্ভব নয়। তবে অহেতুক ঘোরাঘুরি করা কোনোভাবেই সমীচীন নয়।

আজ বুধবার (২৭ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে করোনা ভাইরাস (কভিট-১৯) মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন আয়োজিত সমন্বয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশ করোনাভাইরাসের হাত থেকে মুক্ত থাকেনি। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো করোনাভাইরাসের কারণে পর্যুদস্ত অবস্থা। অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত সেখানে শনাক্তরোগীর ৬ ভাগ মৃত্যুবরণ করছে, যুক্তরাজ্য যেখানে মেডিক্যাল সায়েন্স অনেক উন্নত সেখানেও শনাক্ত রোগীর ১৪ পার্সেন্ট, বেলজিয়ামে শনাক্ত রোগীর ১৫ পার্সেন্ট, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৩.২ পার্সেন্ট, পাকিস্তানে ২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে মৃত্যুর হার এখন ১পয়েন্ট ৪ ভাগ। সরকার শুরু থেকে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করার কারণে মৃত্যুর হার এখনো অনেক দেশের তুলনায় কম। এটি একটি বৈশ্বিক দুর্যোগ, সবার সহযোগিতা নিয়েই আমরা এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে চাই।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক সমস্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, যেকারণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেক দেশের মতো ভেঙে পড়েনি। অনেক দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। পাকিস্তানেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছিল। সেখোনে ডাক্তারদেরকে এরেস্ট করতে হয়েছে হাসপাতাল চালু রাখার জন্য। বাংলাদেশে সেরকম পরিস্থিতি হয়নি।

বাংলাদেশের অনেক ডাক্তার সাহসিকতার সাথে এই পরিস্থিতিতে করোনা আক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অনেকে অহেতুক সরকারের সমালোচনা করেন। আমাদের ব্যবস্থাপনা যদি ভালো নাহতো বা খারাপ হতো তাহলে এই শনাক্ত রোগীর মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশেও বেশি হতো। বরং আমাদের দেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় এখন কম।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কভিট-১৯ ব্যবস্থাপনায় অনেকে ধন্যবাদ না দিলেও বিশ্ব সম্প্রদায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব স্বীকৃত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, ওর্য়াল্ড ইকোনমিক ফোরামসহ অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতার প্রশংসা করেছেন। আমরা তার নির্দেশেই কাজ করছি, আজকের বৈঠক সম্পর্কেও তিনি অবহিত আছেন।

তিনি বলেন, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবন রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী যেভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন, একই সাথে বাংলাদেশের মতো ১৭ কোটি মানুষের একটি উন্নয়নশীল দেশে দু’মাসের বেশি সময় সারা দেশের সমস্ত কার্যক্রম প্রায় বন্ধ। দুমাস ধরে খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছে। এখনো একজন মানুষও অনাহারে মৃত্যুবরণ করেনি। দেশে প্রায় সাতকোটি মানুষ নানাভাবে সরকারের সহায়তার আওতায় এসেছে। এজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধন্যবাদ পাবার অধিকার রাখেন। 

তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, করোনাভাইরাসের মধ্যে সাংবাদিকরা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করছে। ইতিমধ্যে দেড়শতাধিক সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, তিনজনের বেশি সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেছে।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

বক্তব্য রাখেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, ওয়াসিকা আয়েশা খানম এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সিএমপি কমিশনার মাহাবুবুর রহমান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির, সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বিসহ সিভিল প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিসহ সরকারি বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিরা সমন্বয় সভায় অংশ নেন।