৫ বছর ধরে বিধবার ভাতা তুলে খাচ্ছেন 'নেতা করিম'
by আঞ্চলিক প্রতিনিধি, ময়মনসিংহগত প্রায় ২০বছর আগে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আমেনা খাতুনের দিনমজুর স্বামী মারা যায়। এরপর থেকে দুই ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন চলে। এ অবস্থায় সরকার দলীয় নেতা হয়ে যাওয়া সর্ম্পকে দেবরের দ্বারস্থ হয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র জমা দেন বিধবার ভাতা পাওয়ার আশায়। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত হয়ে আমেনার নামে সোনালী ব্যাংক শাখায় নিজস্ব হিসাবে প্রতিমাসে ভাতার টাকাও জমা হয়। আর সেই টাকা তিনমাস পরপর গোপনে উত্তোলন করে আত্মসাত করে আসছেন 'নেতা করিম' (এই নামেই পরিচিত)। এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায়।
বিধবা ভাতাভোগি ওই আমেনা খাতুন হচ্ছেন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর স্ত্রী। অভিযুক্ত আব্দুল করিম হচ্ছেন আমেনা খাতুনের সর্ম্পকে দেবর। স্থানীয় আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা। কয়েকবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন।
জানা যায়, গত রোজার মধ্যে সোনালী ব্যাংক নান্দাইল শাখায় বিভিন্ন উপকার ভোগীদের ভাতা দেওয়ার সময় অন্যান্য বারের মতো ওই নেতা নিজেই ভাতার বইটি নিয়ে ভাতা উত্তোলনে ব্যর্থ হয়ে আমেনা বেগমকে বিভিন্ন কায়দা কৌশলে ব্যাংকে নিয়ে এসে তিন হাজার টাকা উত্তোলন করে সেই টাকা নিজের হাতে নেন। পরে আমেনা বেগমকে ২০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে একটি অটো করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর থেকেই ঘটনাটি প্রকাশ হতে থাকে।
উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে জানা যায়, আমেনা খাতুনের বিধবা ভাতার তালিকাভুক্ত হন ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি। তাঁর বই নং-৫৪৫৫/১ ব্যাংক হিসাব নং-১৫৮৪। এ পর্যন্ত মোটা টাকা উত্তোলিত হয়েছে ৩১ হাজার ২০০ টাকা।
খবর পেয়ে গতকাল বুধবার সকালে ওই গ্রামে গিয়ে আমেনা বেগমকে পাওয়া যায়। তিনি জানান, নিজ ঘরের লাগোয়া একই পরিবারের দেবর সম্পর্কের আব্দুল করিমের কাছে বেশ কয়েক বছর আগে নিজের পরিচয়পত্র ও ছবি জমা দেন। দেবর করিম তাঁকে জানান কোনো কিছু ব্যবস্থা হলেই জানানো হবে। এর মধ্যে দিন চলে গেলেও কোনো ধরনের খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে দেবর করিম রাগান্বিত হয়ে যায়। যার ফলে আর কখনো কিছু জানতে চাওয়া হয়নি। গত রোজার মধ্যে করিম তাঁকে বলেন তাঁর সাথে একটু সদরে যেতে হবে। পরে তিনি আরও নারীদের সাথে সদরে একটি ব্যাংকে প্রবেশ করেন। অপেক্ষার পর ব্যাংকের লোকজন নিজের নাম ও স্বামীর নাম ধরে ডাকতেই তিনি কাছে গেলে এক ব্যক্তি তাঁর হাতে তিন হাজার টাকা তুলে দেন। সেই সাথে বলেন, এটাই তাঁর বিধবা ভাতার টাকা। এর আগে কোনো দিন এতো টাকা না পেয়ে আজ কেন পেলেন এ ধরনের প্রশ্ন জাগলেও নেতার কাছে বলার সাহস পাননি। উপরুন্ত টাকা নিয়ে কিছু দূরে আসলেই নেতা করিম তাঁর হাত থেকে টাকা নিয়ে যান। পরে সড়কে গিয়ে একটি ইজিবাইকে উঠিয়ে ২০০ টাকা হাতে ধরিয়ে বিধায় করে দেন। এ ঘটনাটি তিনি ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করা ছেলেকে অবহিত করলেই ঘটনা জানাজানি হয়। এ সময় বাড়িতে উপস্থিত অনেকেই এ ঘটনার জন্য করিমের বিচার দাবিসহ আমেনার ভাতার টাকা ফেরত চান।
এ বিষয়ে জানতে আব্দুল করিমের বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, এসব কি বলেন। আমি তো ওই নারীকে চিনি না। এটা এক ধরনের অপবাদ। আমি এ ঘটনায় দেখে নিবো।
এ সময়েই ছুটে আসেন আমেনা বেগম। তিনি তাৎক্ষনিক এর প্রতিবাদ করে বলেন,আপনি (নেতা করিম) তো আমারে ব্যাংকে নিয়ে গেছেন। আমার হাতে থাকা তিনহাজার টাকাও নিছেন। অহন অতো বড় মিছা কত কিবায় কইন। এ সময় করিম চেয়ার থেকে উছে ওই নারীর দিকে তেড়ে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে মারতে যান।
নান্দাইল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইনসান আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, তিনি জানার পর ওই নারীর সাথে কথা বলতে গ্রামে যান। সেখানে অনুসন্ধান করে টাকা আত্মসাতের প্রমান পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এলাকার আরও তিন নারীর বিধবা ভাতার বই ওই করিমের কাছে থাকতে পারে। এ সব ঘটনায় তদন্তের পাশপাশি ২/১ দিনের মধ্যেই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপজেলা মনিটিরিং কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই করিমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।