ভারত যেভাবে ‘আত্মহত্যা’ দেখে আইসিসির
by স্পোর্টস ডেস্কআন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) প্রকারান্তরে হুমকিই দিয়েছে যে, ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) যদি কর রেয়াতের নিশ্চয়তা না দেয় তাহলে ভারত ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকার হারাবে। তবে বিসিসিআই কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, খেলাটির স্বার্থেই আইসিসির দূরদর্শী পরিচালকেরা এমন সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত নেবেন না।
সংবাদ সংস্থা আইএএনএসকে বিসিসিআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন যে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের আইসিসির পরিচালকদের ওপর পূর্ণ আস্থা আছে এবং তারা বিশ্বাস করেন ভারতের কাছ থেকে বৈশ্বিক ইভেন্টটি কেড়ে নিয়ে আত্মহত্যা তারা করবেন না। ‘আইসিসি নয়, কিছু গোষ্ঠী তাদের স্বার্থের কারণেই এমন গল্প ফাঁদছে মাঝেমাঝেই। আইসিসির বেশিরভাগ পরিচালকই দূরদর্শী এবং বাস্তববুদ্ধি সম্পন্ন। এবং এরা এই গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে আইসিসিকে হারাকিরির দিকে ঠেলে দিতে চান না। আর যদি সত্যিই তারা এই পদক্ষেপ নেন, তাহলে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি বিসিসিআই ধ্বংসস্তুপের মধ্যে বসেও হাসতে থাকবে আর আইসিসির অব্স্থা হবে করুণ’-বলেছেন ওই কর্মকর্তা।
২০১৫ সালে আইসিসির সব বোর্ডের সাইন করা আয়োজক চুক্তি (হোস্ট এগ্রিমেন্ট) অনুযায়ী, আইসিসির যেকোনও ইভেন্টের আয়োজন ভার পাওয়ার পর সেটি মাঠে গড়ানোর ১৮ মাস আগে কর রেয়াতের বিষয়টির নিশ্চয়তা দিতে হবে। সে অনুযায়ী ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য কর রেয়াত নিশ্চিত করার শেষ সময়সীমা ছিল গত এপ্রিল মাস। কিন্তু প্রায় সারাবিশ্বই যেহেতু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে লকডাউন অবস্থায় রয়েছে, সেজন্য ভারতীয় বোর্ড ৩০ জুন পর্যন্ত বা লকডাউন ওঠার পর একমাস সময় বাড়ানোর অনুরোধ করে। কিন্তু আইসিসির বানিজ্যিক শাখা আইসিসি বিজনেস কর্পোরেশন (আইবিসি) সময় বাড়াতে অস্বীকার করেছে।
বিসিসিআইয়ের আরেকজন কর্মকর্তার চোখে পুরো বিষয়টি বিস্ময়করের চেয়েও বেশি কিছু, ‘মজার ব্যাপার হলো, তাদের আইনজীবী জনাথন হল লিখেছেন যে আইবিসি বিসিসিআইয়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন প্রশ্ন হলো, বিষয়টি বোর্ডের দেখার আগে বা পক্ষে-বিপক্ষে ভোটে সিদ্ধান্ত না হয়ে এটা কীভাবে ঘটলো?’
ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে কর নিয়ে আইসিসির এই দ্বন্দ্ব অবশ্য অনেকদিন ধরেই চলছে। নির্দিষ্ট করে বললে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত সরকার আইসিসিকে কোনও রকম কর ছাড় না দেওয়ার পর থেকেই। ভারতে অনুষ্ঠিত ওই টুর্নামেন্টে কর ছাড় না পাওয়ায় ২-৩ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় আইসিসি। আবার ভারতে অনুষ্ঠেয় আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যদি ভারত সরকার কর রেয়াত না দেয়, তাহলে আইসিসির সম্ভাব্য ক্ষতি নাকি হবে ১০ কোটি ডলার।
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা থেকেই আইসিসি গত ফেব্রুয়ারিতে বিসিসিআইকে জানিয়ে দেয় যে সরকারের কর রেয়াত নিশ্চিত করতে না পারলে ভারত ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আয়োজন সত্ত্ব হারাবে।
এদিকে বাস্তবতা হলো, ভারত ক্রিকেটের প্রধানতম অর্থনৈতিক শক্তি। বৈশ্বিক ক্রিকেটের শতকরা ৮০ ভাগ স্পনসরই ভারতীয়। আবার ২০১৫ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আইসিসির সব বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের টিভি সত্ব কিনে রেখেছে ভারতেরই কোম্পানি স্টার ইন্ডিয়া।