https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/27/6407d55e5793c843b73381c297ed2a42-5ece7c398bf38.jpg

আমিকে খুঁজে নেওয়ার প্রয়াস

by

করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ–বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ–বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: dp@prothomalo.com

আজ যখন আমরা ভবিষ্যৎ গড়ার পথে এক পা করে এগোচ্ছি, তখনই এক বিপর্যয় এল সব গ্রাস করতে। মনে হাজারো চিন্তা আর স্বপ্ন নিয়ে আজ আমরা গৃহবন্দী। আজ আমার চিরচেনা শহরটাও যেন খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। জনমানবশূন্য এই রাস্তায় সেই কোলাহলটা আজ খুব মিস করছি। ছোটদের মাঠে খেলা, নদীতে গোসল করা এই স্মৃতিগুলোকে আজ খুব রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে। মনকে শান্ত করি এই ভেবে যে এই পরিস্থিতি হয়তো আপন মানুষদের কাছে থাকার সময়টাকে একটু বাড়িয়ে দিয়ে গেল। মনে পড়ে সেই খুনসুটির বন্ধুগুলোকে। মন যেন আজ তাদেরই সঙ্গ খোঁজে। আর খারাপ লাগে সেসব কাকিমা-মাসিমার জন্য যারা পাশের বাড়ির হাঁড়ির খবর না নিতে পেরে কী করুণ অবস্থাতেই না আছে।

তবে এর মধ্যেও দেখা মিলছে নাম না জানা সেই অপরূপা পাখিদের। আজ যেন শুধু তারাই বিনা নিমন্ত্রণের অতিথি। তখন যেন দিব্যকর্ণ প্রাপ্ত হয়ে বুঝতে পারি তাদের কলরবের মানে। মনে হয় তারা যেন তাচ্ছিল্যের সুরে বলছে, ‘আজ চেয়ে দেখ, তোমরা খাঁচায় বন্দী আর আমরা মুক্ত আকাশে ডানা মেলেছি।’
তবে এসবের মাঝে আজ নিজেকে নতুন করে জানার সুযোগ এসেছে। নিজের মধ্যকার প্রতিভাগুলো একদিন উঁকি দিয়েছিল, শত ব্যস্ততার মাঝে তারা হয়তো নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। সারা দিনের কর্মব্যস্ততায় নিজেদেরও যে কিছু ইচ্ছা ছিল, স্বপ্ন ছিল, তা হয়তো আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম। আর অনেক সময় দায়িত্ব কর্তব্যের চাপে সেই স্বপ্নগুলোকে হয়তো গলা টিপে মেরে ফেলি আমরা। আবার কেউ কেউ তো এমনও আছি, যারা জানিই না যে কিসে আমাদের প্রাণবায়ু বাঁধা। আজ যখন অবসর সীমাহীন, তখন সবকিছুর মাঝে নিজের জন্য একটু সময় বের করেই নিলাম। মনের ছন্দকে নয় কবিতায় প্রকাশ করলাম, বাথরুম সিঙ্গার আজ নাহয় হারমোনিয়ামেই একটা গান গাইল। ঘুঙুরগুলোকে আজ হাতে নিয়ে শুধু স্মৃতি রোমাঞ্চকর না করে নয় পায়ে দিয়ে মনের আনন্দে একটু নেচেই নিলাম। মনের সব ইচ্ছার নয় আজ বহিঃপ্রকাশই ঘটল। ক্ষতি কী?
অন্য সময় আমারা যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়লে যে মানুষটা একা হয়ে পড়তেন, আমার মা। আজ তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছি। সবার অবসরের অভাব না থাকলেও তাঁর ব্যস্ততা অপরিসীম। তবে তাঁকেও কদিন ধরে দেখি আমার সঙ্গে গানে গলা মেলান। কোনো এক অজানা জড়তা হয়তো তাঁর কণ্ঠকে দমিয়ে রেখেছে।
আজ আমিও নিজের প্রতিভাগুলোকে খুঁজছি, যারা হবে আমার একাকিত্বের সঙ্গী। নাচ, গান, আবৃত্তি, লেখালেখি আর সঙ্গে পড়াশোনা নিয়ে চলছে এই সময়। এই সবকিছুই আমার আমিটাকে খুঁজে নেওয়ার প্রয়াসমাত্র। জানি, এই লকডাউন শেষে যখন সবাই আবার কর্মমুখর হয়ে পড়বে, ফিরে যাবে সেই একঘেয়ে জীবনে তখন হয়তো আবার ধামাচাপা পড়ে যাবে মনের এই খোরাকগুলো। তবু পরিশেষে শুধু একটাই কামনা, এই ব্যস্ততার অজুহাতে আমরা যেন নিজেদের হারিয়ে না ফেলি।

*লেখিক: শিক্ষার্থী, নরসিংদী সরকারি কলেজ। eshasaha73@gmail.com