বরিশালে ৯৭ মিমি. বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস, পানির নিচে নিম্নাঞ্চল
by নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালবরিশালসহ দেশের দক্ষিণ উপকূলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। এর প্রভাবে আজ বুধবার সকালে চার ঘণ্টায় বরিশালে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই সঙ্গে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়ার দাপট ছিল দিনভর। উপকূলের নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ার থেকে দুই থেকে চার ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। জোয়ারের পানি আর বৃষ্টিতে নাকাল হচ্ছেন ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত চর ও নিচু এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দারা। একই সঙ্গে বরিশাল নগরের অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।
দুপুরের পর বৃষ্টি কমলেও শেষ বিকেলে আবার আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। রাতে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা বলেছেন স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগের পর্যবেক্ষকেরা।
বরিশাল আবহাওয়া বিভাগ সূত্র জানায়, আজ সকাল ৮টা ১০ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এটা বরিশাল বিভাগে এ বছরে এক দিনের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এ ছাড়া বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় ৩১ কিলোমিটার।
২০ মে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ধকল কাটতে না কাটতেই গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই আবহাওয়া বৈরী হেয় ওঠে। সেই সঙ্গে নদ-নদীতে অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস। এতে চর ও নিম্নাঞ্চলে জোয়ারের পানি ঢুকে ঘরদোর ভাসছে।
গতকাল থেকেই আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া ও দুই থেকে চার ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা জারি করে। দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলে। নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেতের পরিবর্তে আজ ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে।
বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা দেয় আবহাওয়া বিভাগ।
বরিশাল সদর উপজেলার দক্ষিণ জাগুয়া গ্রামের বাসিন্দা সেলিম মৃধা বললেন, ‘বইন্নায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত। হ্যারপর এক সপ্তাহ ধইরা জোয়ারের পানিতে ঘর-দুয়ার তলাইয়্যা সয়লাব। রান্ধনের মতো জাগাও নাই।’ এই গ্রামের আরেক বাসিন্দা তামিম হোসেন বলেন, ‘ঘরের বারান্দার চালা উড়ে গেছে। ঘরদোরে পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে প্রতিদিন। রান্না করার মতো অবস্থা নেই। এর ওপরে প্রবল বর্ষণে অবস্থা আরও খারাপ।
আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরগুনায় বঙ্গোপসাগরের তীরের তালতলী উপজেলা। এখানকার অনেক গ্রাম ঝড়ের তাণ্ডবে এলোমেলো হয়ে আছে। তালতলীর পাজরাভাঙা গ্রামের বিধবা তারা ভানু। ঝড় তাঁর মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাবা, ছোট্ট ঘরটুক ছাড়া মোর তো কিছু আলহে না। হ্যাও বইন্নায় ভাইঙ্গা-চুইড়্যা গ্যাছে। থাকমু কই, খামু কী, কিচ্ছু কইতে পারি না।’ এক সপ্তাহ ধরে দিনে ও রাতে দুবার জোয়ারে ঘরদোর ভাসছে এই উপজেলার অংকুজানপাড়া, জয়ালভাঙা, খোট্টারচর, নিদ্রা, আশারচরসহ বেশ কয়েকটি এলাকা।
বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মো. আনিসুর রহমান বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গোপসাগরের তারতম্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলে প্রবল বর্ষণ, দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এটা আরও বেশ কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।