সিকদার ভাইদের কাণ্ডে পাঠকের মন্তব্য
'এ যে দেখছি ব্যাংকারসহ ডাকাতি!'
by নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা'কোন দিন যেন মাথায় পিস্তল ঠেকাইয়া কয় ব্যাংক আমাগো লেইখা দে! কই যামু...আগে ব্যাংক ডাকাতি শুনেছি কিন্তু এ যে দেখছি ব্যাংকারসহ ডাকাতি!'
এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে 'গুলি করে হত্যার চেষ্টা' ও বাসায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের নিচে একজন পাঠকের মন্তব্য এটি।
প্রথম আলো গতকাল মঙ্গলবার রাতে অনলাইনে এ নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। রাত ১০টা ৫২ মিনিটে প্রকাশ করা প্রথম প্রতিবেদনের শিরোনাম 'এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে গুলি, আটকে রেখে নির্যাতন: সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা'। দ্বিতীয় প্রতিবেদনটির শিরোনাম 'এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে হুমকি সিকদার গ্রুপের: গুলি করে জন্মের মতো খোঁড়া করে দিব'। এটি প্রকাশ করা হয় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৪৮ মিনিটে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির মধ্যে গভীর রাতে প্রকাশিত হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাঠক দুই প্রতিবেদনে নিজেদের মন্তব্য তুলে ধরেছেন। আজ বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত দুই প্রতিবেদন মিলিয়ে মন্তব্য এসেছে ২৪২টি, যা দিনের সর্বোচ্চ।
মামলায় অভিযোগ, ৭ মে এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদার ও পরিচালক দিপু হক সিকদার। তাঁরা দুই ভাই। এ নিয়ে ১৭ মে গুলশান থানায় এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা করে।
অনলাইনে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে পাঠকেরা নানা রকম মন্তব্য করেছেন। কেউ ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা এখন আর অস্বাভাবিক নয়। যেমন, রিপন চৌধুরী নামের একজন পাঠক লেখেন, 'এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। স্বাভাবিক ঘটনা দুর্ঘটনাক্রমে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে।'
এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস কীভাবে পাওয়া যায়, তা তুলে ধরেছেন আসিফ উল হক। তিনি লিখেছেন, 'যে দেশে ব্যাংক লুটকারীদের কোনো সাজা হয় না, উল্টো নমিনেশন দেওয়ার মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়, সে দেশে এভাবে খোদ ব্যাংকের এমডিকে গুলি করে, কিডন্যাপ (অপহরণ) করে ঋণের নামে ব্যাংক লুট করা হবে, এতে আর অবাক হওয়ার কী আছে?'
অবশ্য এন আহমেদ নামের একজন পাঠক মোটেও অবাক হননি। তিনি লিখেছেন, 'আমি তো মোটেও আশ্চর্য হইনি। যেটা হয়েছে, এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। না হওয়াটা অস্বাভাবিক!'
কোনো কোনো পাঠক বলেছেন, এটা সিনেমার কাহিনিকে হার মানায়। মোহাম্মদ ইয়াকুব বলেন, 'এটা কি বলিউডের সিনেমা, নাকি বাস্তব।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাঠক টেনে এনেছেন সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া আমেরিকান অ্যাকশন থ্রিলার জঁরার সিনেমা 'এক্সট্রাকশন'কে। পরিচালক স্যাম হারগ্রেভের এই সিনেমাটির প্রেক্ষাপট ঢাকা ও ভারতের মুম্বাই। অনেকেই অভিযোগ করছেন, সিনেমাটির কাহিনি আহামরি কিছু নয়। প্রথম আলোর ওই পাঠক মনে করেন, সিকদার ভাইদের ঘটানো কাণ্ড নিয়ে 'আসল এক্সট্রাকশন' তৈরি হলে কাহিনিকে আর কেউ ফালতু বলতে পারবে না।
ইউসুফ নূর হোসেইন নামের এক পাঠক লিখেছেন, 'সিকদার গ্রুপের এসব পান্ডা সরকারি আশকারা না পেলে হয়তো আইনের শাসনকে ভয় ও সমীহ করে চলত।'
পাঠকের কেউ কেউ এই ঘটনায় বিচার হবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে ঘটনা প্রকাশিত হওয়াকে তাঁরা ইতিবাচক বলে মনে করছেন। একজন পাঠক লেখেন, 'অন্যরা মুখ খুললে হয়তো এমন আরও অনেক কাহিনি উঠে আসবে। বিচার চাচ্ছি না, জানি হবে না। তবে পর্দার আড়ালের গল্প জনগণের জেনে রাখা উচিত।'
আরেক পাঠক লিখেছেন, 'এই সিকদারেরা রাষ্ট্র চালায়। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার নামে লুট করে। আর সরকার তাদের একসময় মাফ করে দেয়। জনগণের প্রতিটি টাকার হিসাব নিশ্চয় সরকারকে দিতে হবে।'
গুটি কয়েক পাঠক ঘটনাটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, ৭ মে ঘটনা ঘটলেও মামলা কেন ১৯ মে হলো? আবার কেউ কেউ সিকদার ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস দেখানোয় ব্যাংকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এই ঘটনার বিচার না হলে পরিণতি কী হবে, তা স্মরণ করিয়ে দেন কোনো কোনো পাঠক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লিখেছেন, 'এই ঘটনার উদাহরণ দিয়ে পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটাবেন। সেগুলো প্রকাশিত হবে না। ভুক্তভোগীরা প্রকাশ করার সাহস পাবেন না।'
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে অনেক পাঠকই নাম প্রকাশের সাহস দেখাননি। প্রথম আলোর অনলাইনে পাঠকেরা নাম প্রকাশ না করে মন্তব্য করতে পারেন। তবে তাঁদের নিবন্ধন করতে হয়। সাধারণত, বেশির ভাগ পাঠকই নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করেন। কিন্তু সিকদার ভাইদের সংবাদে বেশির ভাগ পাঠক নাম প্রকাশ করতে চাননি।
পাঠকদের একটি অংশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাঠক লেখেন, 'দুদক যদি ঠিকঠাক কাজ করত, তাহলে এসব ব্যবসায়ী অনেক আগেই আইনের জালে আটকা পড়ে যেত, কাউকে গুলি করার ক্ষমতা থাকত না।' আরেক পাঠক লেখেন, 'দুদক কী করবে? দুদকের কিছুই করার সামর্থ্য নাই।'
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামানের মন্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে তিনি বলেন, এই মামলার দুই আসামি পলাতক আছেন। তাঁদের পেলেই গ্রেপ্তার করা হবে। এ বিষয়টি টেনে এনে কেউ কেউ মন্তব্য করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, 'করোনার মধ্যে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার দাবি জানাচ্ছি।' আরেকজন লেখেন, 'টিনের চশমা পরে খুঁজলে সিআইএ–ও (মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা) ওঁদের খুজে পাবে না।'
গোলাম মোস্তফা নামের এক পাঠক লেখেন, 'অপেক্ষায় আছি, আমাদের সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, তা দেখতে।' একজন পাঠক এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
(এই প্রতিবেদনে পাঠকের মন্তব্যের অর্থ অপরিবর্তিত রেখে প্রয়োজনে কিছু ক্ষেত্রে বাক্য গঠন ও বানান ভুল সংশোধন করা হয়েছে।)