করোনা উপসর্গ নিয়ে কিশোরের মৃত্যু, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এনেও নমুনা সংগ্রহ ছাড়াই দাফন!

by
https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/500x0x1/uploads/media/2017/08/14/cdf77c088e5b39ddb78e495d6dba68bb-599145466fead.jpg
লাশ

কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে মমিনুল ইসলাম (১৪) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ মে) দুপুরে ওই কিশোরকে রাজীবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

তবে অভিযোগ রয়েছে, করোনা উপসর্গ দেখার পরেও তার নমুনা সংগ্রহ করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। নমুনা সংগ্রহ না করার কারণ হিসেবে পরিবারের তথ্য গোপন ও নৌকা না থাকার কথা জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেলওয়ার হোসেন। তবে নৌকা কোনও অজুহাত  হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন রাজীবপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরান।

প্রসঙ্গত: ব্রহ্মপুত্র নদী দ্বারা কুড়িগ্রামের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা রাজীবপুর। জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান বাহন হচ্ছে নৌকা। তবে উপজেলা প্রশাসনের নিজস্ব নৌকা ২৪ ঘণ্টাই ঘাট পাড়ে প্রস্তুত থাকে।

এদিকে নমুনা সংগ্রহ ছাড়াই কিশোরের লাশ ফেরত পাঠানো পর ওইদিনই পারিবারিকভাবে লাশ দাফন করা হয়। এরপর মৃতের চাচি সাবিনার (২৮) ডায়রিয়া ও চাচাতো বোনের জ্বর দেখা দিলে তাদেরকেও রাজিবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও ওই কিশোরের বাড়িতে আরও দুই শিশু ডায়রিয়া ও বমিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজীবপুর স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানবিদ রোকনুজ্জামান রাজু।

মৃত মমিনুল উপজেলার জাওনিয়ার চর লম্বাপাড়া গ্রামের জাবেদ আলীর পুত্র।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেলওয়ার হোসেন জানান, মৃত কিশোরের পরিবার জানিয়েছে তার অ্যাজমা ছিল। পরে সে জ্বর, বমি ও পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে পৌঁছার আগেই মারা যায়। তার দাবি, হাসপাতালে নেওয়ার পর তার পরিবার তথ্য গোপন করায় নমুনা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ওই কিশোরের স্বজন ও প্রতিবেশীরা হাসপাতালে এসে বলেছিল, সে (মমিনুল) কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভোগার পর তার ডায়রিয়া, বমি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। সরকারি গাইডলাইনে এগুলোকে করোনার উপসর্গ বলা হচ্ছে। এমন তথ্য জানানোর পরও তার নমুনা সংগ্রহ না করার কারণ জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ওই সময় নমুনা সংগ্রহ করবো কিভাবে? হুট করে কুড়িগ্রামে স্যাম্পল পাঠাতে পারবেন না, নৌকা নাই। ওই সময় তার পরিবার তথ্য গোপন করায় ওই কিশোরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। তবে তার পরিবারের চার সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।’

তবে করেনার নমুনা সংগ্রহ করে কুড়িগ্রাম শহরে পাঠানোর জন্য নৌকা কোনও অজুহাত হতে পারে না মন্তব্য করে রাজীবপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরান জানান,  ‘অযৌক্তিক কথা বল‌লে হ‌বে না। উপ‌জেলা প্রশাস‌নের ‌নিজস্ব নৌকা র‌য়ে‌ছে। রাজীবপুর স্বাস্থ‌্য বিভাগ‌কে ব‌লে‌ছি, ক‌রোনা সংক্রান্ত কোনও উপসর্গ দিনরাত ২৪ ঘণ্টার ম‌ধ্যে যখনই হ‌বে আমা‌কে জানা‌লে সা‌থে সা‌থে আমি ব‌্যবস্থা নেবো। নৌকা ইনস্ট‌্যান্ট র‌য়ে‌ছে, উনি (ইউএইচএফ‌পিও) বল‌লেই হ‌বে না।'

নমুনা সংগ্রহ করার বিষয়ে ইউএনও আরও বলেন, তি‌নি (ডা. দেলওয়ার) ব‌লে‌ছেন যে ব‌মি ক‌রে‌ছে এবং পাতলা পায়খানা হ‌য়ে‌ছিল। আবার বলেছেন, ক‌রোনা উপসর্গ ছিল না। কিন্তু এটা কোনও যু‌ক্তির কথা হ‌তে পা‌রে না। কেন এমনটা করা হলো সে ব্যাপারে সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হবে।

এরপর ওই কিশোর মারা যাওয়ার ঘটনায় নেওয়া ত্বরিৎ পদক্ষেপের কথা জানিয়ে ইউএনও বলেন, ‘করোনা সন্দেহে কিশোরের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই ওই পরিবারসহ আশেপাশের আরও কয়েকটি পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ওই কিশোরের পরিবারের চার সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে দুই সদস্যকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে।’