https://www.dhakatimes24.com/assets/news_photos/2020/05/27/image-167812.jpg

দাগ কাটা ঈদ

by

প্রতীক ওমর

কোথায় যেন ছন্দ পতন। সুর আর তালের বিস্তর ফারাক। মিলন হচ্ছে না। মনেও ধরছে না। চিরচেনা গান, চিরচেনা সুর কেমন যেন বিদঘুটে লাগছে। উৎসবেও ভাটা। রঙ নেই। রসও নেই। করুণ আওয়াজ বাতাস ভারি করে তুলছে। অশ্রুতে ভাসছে কিশোরীর চোখ। চারিদিকে অন্ধকার। ঘণ হয়ে আসছে। প্রিয়জন একাকি অন্যকোথাও নিভৃতে চুপ হয়ে আছে। অনেক প্রিয়মুখ মাটির বিছানায় ঘুমিয়ে গেছে সাম্প্রতি। কষ্টে জরাজীর্ণ হৃদয়। মন ভালো নেই কারো। এমন দিনে ঈদ।

যুগ যুগ ধরে চলে আসা আবহমান গ্রাম বাংলার মুসলিম ঐতিহ্যে ভাটা পড়েছে এবার। ঈদের দিনক্ষণ ঘটা করে উদযাপন হয়ে আসতো মুসমানের ঘরে ঘরে। সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই ঈদের আমেজ ছড়িয়ে পড়তো পাড়া মহল্লায়। স্বজনদের আনাগোলায় মুখরিত হয়ে উঠতো প্রতিটি বাড়ি। অথচো কি সুনসান নিরবতা বিরাজ করছে বাড়িগুলোতে। ঈদগাহে যেতে মানা। ছোট পরিসরে মহল্লার মসজিদেই সেরে ফেলা হয়েছে সুন্নতে মোয়াক্কাদা দুই রাকারত নামাজ। মনেই হয়নি ঈদ ছিলো।

https://www.dhakatimes24.com/templates/web-v1/images/eValy-4-4-2020.png

ছোট বেলায় যখন থেকে ঈদের আনন্দ বুঝতাম তখন ঈদের দিনের জন্য অপেক্ষা করতাম আরো আগে থেকেই। সেই অপেক্ষার পালা যেন শেষ হতো না। পাড়ার সব শিশু কিশোরের দল ফাঁকা মাঠে গিয়ে ধুম করে চাঁদ দেখার আয়োজন হতো। মুধর স্মৃতি। যদিও এখন আধুনিক যন্ত্রের যুগে এভাবে চাঁদ দেখা হয়না বহুদিন। তবে দল বেঁধে মাঠে গিয়ে নামাজ আদায়ের ঐতিহ্য এখনো বহমান। সময় বেড়েছে। জীবন জীবিকার তাগিদে কবেই গ্রাম ছাড়া হয়েছি সেই দিন তারিখ এখন আর মনেও নেই। বন্ধু প্রিয়জনরাও নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। আড্ডা দেয়ার সময়টাও হয়ে ওঠেনি কতদিন ধরে।

বছরে দুইটি ঈদের জন্য প্রহর গুণতে হয় এখন আমাদের। ঈদ এলেই বাড়ি যাওয়া। মাঠে গিয়ে নামাজ আদায়ের পর বন্ধুদের মিলন মেলা। বুকের সাথে বুক মিশিয়ে প্রশান্তি বিনিময় করা। দিন ব্যাপি চলে মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা দু:খ সুখের লাখো কথা। এবার বিনিময় হয়নি জমানো কথাগুলো। বুকের সাথে বুকও মেলানো হয়নি। চোখের দেখাও মেলেনি অনেকের সাথে। মনটা হাহাকার করছে।

বাল্য বন্ধুদের জন্য। আপনজনদের জন্য। ঈদ এমন নিরস হয়ে আসবে সেই কথা কখনো কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। কিন্তু নিরস ভাবেই এসেছে। বহুবছরের ঐতিহ্যকে ভেঙ্গে খানখান করেছে। ভেঙ্গেছে আমাদের হৃদয়ও। মাঠের সবুজ ঘাসগুলো আরো গাঢ় হয়ে ফুটেছে। দীর্ঘ দিন মানুষের পায়ের ছাপ পরেনি। মুসলমানদের সিজদার জন্য প্রস্তুত ছিলো পুরো মাঠ, ঘাস এবং মাটি। প্রকৃতির এতো আয়োজন শর্তেও প্রকৃতির আরেক বাঁধায় থমকে গেছে সব কিছু।

রঙিন জামা কিংবা লাল বেগুনি শাড়ী কারো শরীরে সেভাবে দেখা যায়নি। সীমাবদ্ধতার ঈদ। শঙ্কার ঈদ। ভয়ের ঈদ। দূরে থাকার ঈদ। গ্রামে মায়ের একা একা বসে কাটানোর ঈদ। মায়ের হাতের সেমাইয়ের স্বাদ বঞ্চিত ঈদ। হৃদয়ে দাগ কাটার ঈদ।

করোনায় চাপা পড়েছে এবারের সব আয়োজন। সেমাই খেতেও আসেনি পরশিরা কেউ। বেঁচে থাকার চিন্তায় বুদ হয়ে আছে সবাই। সৃষ্টিকর্তার কাছে এবার একটাই প্রার্থনা ছিলো, ক্ষমাকরো, রহম করো, তোমার বান্দাদের রক্ষা করো। প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে আবারো যেন ঈদ করতে পারি সেই পরিবেশ ফিরিয়ে দিও।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক