https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2017/08/24/6f355809d8b40bb1c699a956863c1573-599ea6506bd3b.jpg
ফাইল ছবি

জুনে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট, যাত্রীকে দিতে হবে তিন প্রশ্নের উত্তর

by

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ায় বিমান চলাচলব্যবস্থা কিছুটা ডানা মেলতে শুরু করেছে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পাকিস্তানে এবং ২৫ মে থেকে ভারতে স্বল্প পরিসরে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুটি দেশের মতো বাংলাদেশেও জুন মাস থেকে সীমিত পরিসরে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালুর চিন্তাভাবনা চলছে। সে ক্ষেত্রে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে যাত্রীকে।

আজ বুধবার বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মহিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্তে আমরা আসব।’

সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এর আগেই ২১ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করার ব্যাপারে ইঙ্গিত এসেছে। এরই অংশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে জোরেশোরে আলোচনা চলছে।

তবে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালুর আগে কয়েকটি বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে এগোতে চাইছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিভিল এভিয়েশন)। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার বেশি। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। তা ছাড়া ফ্লাইট চালুর সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনব্যবস্থার বিষয়টিও রয়েছে। প্রতিবেশী ভারতে গণপরিবহনব্যবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে উন্নত। সেখানে একটি নিয়মের মধ্যে গণপরিবহন চলাচল করে। বাংলাদেশে সেটি নেই। এ দেশে গণপরিবহনব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা ব্যাপক। কোনো নিয়ম না মেনেই যাত্রী বহন করা হয়। অথচ এ দেশে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানযাত্রীদের বড় একটি অংশ গণপরিবহনে করে বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া করেন। তাতে করে এসব যাত্রীর করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি রয়ে গেছে। তাই এসব তথ্য যাচাই করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বেবিচক।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালু করতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কীভাবে আকাশপথে যাত্রীরা করোনা প্রতিরোধ করে চলাচল করবেন, সে ব্যাপারে একটি নির্দেশনা এরই মধ্যে আমরা দিয়েছি। দেশের সব বিমানবন্দরকে আমরা প্রস্তুতি নিতে বলেছি। সম্প্রতি দেশে করোনা আক্রান্তের হার ও গণপরিবহনের বিষয়গুলো বিবেচনা করছি। আশা করি কাল (বৃহস্পতিবার) এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত দিতে পারব।’

দু–এক দিনের মধ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত
ভাড়া বৃদ্ধির চিন্তা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ
সিদ্ধান্তে বাধা করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি–বিশৃঙ্খল পরিবহনব্যবস্থা
জুনে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট, যাত্রীকে দিতে হবে তিন প্রশ্নের উত্তর

অভ্যন্তরীণ রুট চালু হলেও প্রতিটি ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা উড়োজাহাজের ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি থাকতে পারবে না বলে বেবিচকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধি করা হতে পারে। এ কথা জানিয়ে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বন্ধ রাখার যৌক্তিক কোনো কারণ আমরা দেখছি না। আমরা কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট পরিচালনা করব। সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ফ্লাইটে যাত্রীও অর্ধেক থাকবে। একটি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রীরা আসনে বসবেন। তাই বিপদ দেখছি না। তবে বেবিচক বা সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এখনো পাওয়া যায়নি।’

গত ২১ মার্চ থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব না কমায় কয়েক দফা এ নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ মে পযর্ন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। তবে এর মধ্যে কয়েকবার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট সীমিত পরিসরে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও উচ্চপর্যায়ের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় সেটি কার্যকর হয়নি। ফ্লাইট চালু না হলেও ১০ মে বেবিচকের এক সার্কুলারে ভবিষ্যতে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে নিরাপদে বিমান চলাচল করতে যাত্রী, বিমানবন্দর, বিমান সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের মোট ৩৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নির্দেশনা অনুযায়ী করোনাভাইরাসসহ স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে এ নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে।

যাত্রীকে দিতে হবে তিন প্রশ্নের উত্তর
এর অংশ হিসেবে যাত্রীদের একটি ফরম দেওয়া হবে। ফরমে যাত্রীর নাম, বয়স, লিঙ্গ, জন্মতারিখ, বর্তমান ঠিকানা, এয়ারলাইনসের নাম, ফ্লাইট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, শরীরের তাপমাত্রা, মোবাইল ও ই-মেইল নম্বর পূরণ করতে হবে। একই সঙ্গে ফরমে তিনটি প্রশ্নে হ্যাঁ অথবা না টিক দিয়ে উত্তর দিতে হবে। এক নম্বর প্রশ্নে থাকবে, ‘আপনার (যাত্রী) কি জ্বর বা কফ হচ্ছে?’ দ্বিতীয় প্রশ্নে থাকবে, ‘আপনার কি জ্বর এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে?’ এবং তৃতীয় প্রশ্নে থাকবে, ‘গত ১৪ দিনে কোভিড-১৯ বা এই রোগের কোনো উপসর্গ থাকার কারণে আপনাকে কোনো বিমানবন্দরে বোর্ডিং থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে কি না।’

এই তিন প্রশ্নের যেকোনো একটির উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে যেকোনো যাত্রীকে আর ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হবে না। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ওই যাত্রীকে পরবর্তী চিকিৎসা নিতে হবে। তবে এই তিন প্রশ্নের উত্তর না হলেও যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হলে তাঁকে আর ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হবে না। চেক-ইনের সময় কাউন্টার ও আশপাশের সহযোগীদের সার্বক্ষণিক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, ডিস্পোজেবল ক্যাপ পরতে হবে। প্রতিটি কাউন্টারের পাশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে যাত্রীকে চেক-ইনের লাইনে দাঁড়াতে হবে। প্রতি ফ্লাইটের আগে ডিসইনফেকট্যান্ট ছিটিয়ে ফ্লাইট জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এরপর যাত্রীকে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতে হবে। দেড় ঘণ্টার নিচে কোনো ফ্লাইটে পানি ছাড়া খাবার দেওয়া যাবে না। তবে ডায়াবেটিসের রোগীদের সীমিত আকারে ইনটেক পানি ও জুস দেওয়া হবে। এ নির্দেশনা কার্যকর হলে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটে যাত্রীদের হালকা খাবার পরিবেশন বন্ধ হয়ে যাবে।

এ ছাড়া ফ্লাইটে কেবিন ক্রুদের এন-৯৫ মাস্ক, চশমা, রাবারের হ্যান্ড গ্লাভস ও ফেসিয়াল মাস্ক পরতে হবে। হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক প্রতি চার ঘণ্টায় বদলাতে হবে। তাদের ককপিটে প্রবেশ যত সম্ভব কমিয়ে ইন্টারকমে যোগাযোগ করতে হবে। ফ্লাইটে দুজন কেবিন ক্রু একসঙ্গে খাবার পরিবেশন করতে পারবেন না। ফ্লাইটের দুই সারিতে আসন খালি রাখতে হবে। ফ্লাইটে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে রোগী পাওয়া গেলে তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ওই সব আসনে কেবিন ক্রুরা বসাবেন। সবশেষে ক্রু ও পাইলটদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে।

বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী বহন করে থাকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ তিনটি বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস–বাংলা, নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এই চার বিমান সংস্থা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে প্রতিদিন ১৪০টির মতো অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করত। তবে ফ্লাইট চালু হলেও এই সংখ্যা অর্ধেকের নিচে কমিয়ে আনা হবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।