করোনার ভয়কে জয় করবেন যেভাবে
by অর্ণব সান্যাল, ঢাকাসংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ইহা একটি স্যাটায়ার। হালকাচালে কিছু নিতে না চাইলে, পড়া থেকে বিরত থাকুন। ক্লিক করলেই পুরোটা পড়তে হবে, এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি।
কী দিয়ে শুরু করব, সেটাই ভাবছিলাম। একবার মনে হচ্ছে, ইস্যুর তো অভাব নেই! আবার কখনো হারিকেন জ্বেলেও নতুন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। শেষে ঠিক করলাম, করোনাই সই, আর কী আছে এই জীবনে!
আসলেই জীবনে আর কিছু নেই। এই করোনা এসে পুরো পৃথিবীর ভারসাম্যই নষ্ট করে দিচ্ছে। কখনো যিনি দুই লাইন লেখেননি, তিনিও আজ গল্প-কবিতা লিখছেন। অনেকে তো সারা জীবন বিজ্ঞানে না পড়েও, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করছেন। নতুন ভ্যাকসিন বানিয়েও ফেলতেন, যদি না উপাদানগুলো ঠিক সময়ে পাওয়া যেত! হতচ্ছাড়া সাধারণ ছুটি ওরফে লকডাউন সব ঘেঁটে দিল। চারদিকের সব রাস্তাঘাট বন্ধ করে রাখলে, মুক্তি আসবে কোন দিক দিয়ে শুনি?
এসব যখন খুব করে ভাবছিলাম, আর মুক্তির আসা পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলাম, ঠিক সেই সময়ে মনে পড়ল, আজ আমার বাজারে যাওয়ার কথা ছিল। আড়মোড়া ভেঙে উঠে পড়লাম। যেতে যখন হবেই, আর দেরি করে লাভ কী?
বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমেই বুঝলাম, আমার মতো আরও অনেকেই আজ একই কথা ভেবেছেন। তাঁরা কেউই বাজার যেতে দেরি করতে চাননি। সাধারণ ছুটির শুরুর দিককার অবস্থা এখন ভুলে যাওয়ার দশা। আড়মোড়া ভেঙে ফেলেছে সবাই। কারণ আমরা শব্দের অর্থ বুঝে এগোই। ছুটিকে লকডাউন ভাবার মতো বোকা আমরা নই। তাই সুনসান সেই রাস্তাটা আজ আর নেই। বরং রাস্তায় প্রচুর মানুষ। রাস্তায় রিকশা যেমন আছে, তেমনি আছে প্রচুর প্রাইভেট কার। কয়েকজনকে গলাগলি করে সেলফি তুলতেও দেখলাম।
এসব দেখে আমি একটু বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম। প্রায় ১০–১২ দিন পর বের হয়েছি বলে একটু অপরাধবোধও হলো। অজান্তে মন গুনগুন করে উঠল, ‘মেলায় যাই রে…’।
কিন্তু একটু সন্দেহও হলো। নিজের ওপর অবিশ্বাস চলে আসছিল। আমি কি তবে ভুল দেখেছি? নাহ, চট করে মোবাইলে চেক করে জানলাম, আক্রান্ত বাড়ছেই। মৃত্যুও কমার লক্ষণ নেই।
আমার মনের এই দ্বিধা বেশিক্ষণ জমে থাকতে দিলেন না জনৈক সবজিওয়ালা। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন পরেননি গ্লাভস-মাস্ক? তিনি জানিয়ে দিলেন, যে রোদ পড়েছে, করোনা এই অবস্থায় টিকবে না! আমার দুই হাত দূরে দাঁড়িয়ে আরেক ক্রেতাও এতে সম্মতি জানালেন এবং আমার আরও নিকটবর্তী হলেন। আমার খুব লজ্জা হচ্ছিল, জানেন! গ্লাভস-মাস্ক পরার কারণে এই প্রথম এত লজ্জায় পড়লাম।
তাৎক্ষণিকভাবে সবজি বিক্রেতার চোখে লেগে থাকা সাহস আর মুখে লেপটে থাকা তাচ্ছিল্যের হাসি আমাকে মনে করিয়ে দিল তামিল চিত্রনায়ক ধানুশের কথা। কিছুদিন আগে বাসায় বসে অবসরে তাঁর অভিনীত একটা সিনেমা দেখেছিলাম। ‘মারি টু’। তাতে ভিলেনকে বেশ একদফা ঝাড়ি দিয়েছিলেন ধানুশ। ভিলেন তাঁকে জানাচ্ছিল, সে কতটা খারাপ হতে পারে। আর মারিরূপী ধানুশ উত্তর দিয়েছিলেন এক কথায়। ‘ইফ ইউ আর ব্যাড, আই অ্যাম ইওর ড্যাড’। বুঝতে পারলাম, মহামারিকে সেই একই উত্তর আমাদের দেওয়া হয়ে গেছে। বিশ্বাস করুন, এটা ভেবেই দুঃসাহসে এই গরমেও আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল! বুঝতে পারলাম, ভয়ের কিছু নেই। ‘করুনা ভাইরাস’ আমাদের একটা চুলও ফেলতে পারবে না।
বাজার শেষে বাসায় ফিরেই ফেসবুক খুললাম। ভাবলাম, করোনার ভয় কাটিয়ে ওঠার এই টোটকা জনস্বার্থে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া উচিত। খুলেই দেখলাম, কম্ম সারা। সবাই শেয়ার করছে রাস্তায় পেকে টসটসে হয়ে যাওয়া যানজটের ছবি। আমার সারা জীবনের খেদ, আমি কারেন্ট ট্রেন্ড থেকে পিছিয়ে থাকি। এবারও সেটা প্রমাণিত হওয়ায় বেশ দমে গেলাম। এক কথায় বলতে গেলে, আমি আহত।
এই দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়েই ফেসবুক থেকে বেরিয়ে গেলাম। দেখলেই বাড়ে পিছিয়ে থাকার জ্বালা। সেই জ্বালা আর প্রাণে সয় না! শ্রেণি-পেশানির্বিশেষে এ দেশের অনেক মানুষের সাহসের দুর্নিবার আগুন এই মনকে পুড়ে কয়লা বানিয়ে দেয়।
শেষতক তাই ‘মারি টু’ আবার দেখতে বসে গেলাম। সাহস বাড়ানোর আশায় এতটুকু তো করা যেতেই পারে। অন্তত ওই ডায়ালগ বলাটা তো শিখতে হবে! নইলে করোনা দুয়ারে এসেই গেলে, তাকে বলবটা কী?
পরিশেষে আপনাদের প্রতি অনুরোধ, ভয় পাবেন না। ভয়কে জয় করতে শিখুন। কোনো কিছুর তোয়াক্কা করবেন না। স্রেফ ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা…’ জপতে জপতে সীমিত আকারে বাইরে যেতে থাকুন। করোনা সামনে এলে বলে দিন, ‘ইফ ইউ আর ব্যাড, আই অ্যাম ইওর ড্যাড’। মম-ও বলতে পারেন।
জাস্ট চিল, বেইবি…