বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বৈঠকে বসছে যেসব দল
by উদিসা ইসলাম(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২৭ মে’র ঘটনা।)
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ১৯৭২ সালের ২৯ মে ত্রিদলীয় বৈঠকের আয়োজন করা হয়। দেশের তৎকালীন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির বিষয়ে আলোচনার জন্যই মূলত গণভবনে ওই বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বেশ কিছুদিন ধরেই এই তিন দলের মধ্যে আদর্শিক মিলের কারণে একসঙ্গে কাজ করার কর্মসূচি হাতে নেওয়ার বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়ে আসছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে এই বৈঠকের আহ্বান করেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে দৈনিক বাংলার ২৮ মে’র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশও হয়। জানা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতারাসহ এই বৈঠকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কমরেড মনি সিং যোগদান করবেন। ৭ জুন বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা। তার ঠিক আগে দেশের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের দলীয় বৈঠক ও রাজনৈতিক সংলাপ-অনুষ্ঠান রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করেন।
সামাজিক শত্রু দমনে ছাত্রলীগের উদ্যোগ
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (নূরে আলম ও মাখনের নেতৃত্বাধীন) দেশ থেকে সমাজবিরোধীদের দমন করার জন্য ১৯৭২ সালের ৮ জুন থেকে ‘সামাজিক শত্রু দমন পক্ষ’ পালন করার উদ্যোগ নেয়। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ কর্মসূচি ঘোষণা করে ২৭ মে। সংগঠনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছাত্রলীগ সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে তাদের কর্মসূচি সফল করার জন্য আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, লাল বাহিনী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নসহ সব দেশপ্রেমিক শক্তির সহযোগিতা আহ্বান করেছে।
‘সামাজিক শত্রু দমন পক্ষ’ উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ওই বছর পহেলা জুন থেকে পথসভা ও প্রচারপত্র ইত্যাদির মাধ্যমে জনমত সংগ্রহ করতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি শাখার প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে শাসনতন্ত্র বিবেচিত
২৭ মে (শনিবার) গণভবনে প্রায় আট ঘণ্টাব্যাপী মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুই দফায় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিসভায় দেশের ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হয় বলে খবরে প্রকাশ করা হয়। মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক সকাল ৯টায় শুরু হয়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে এবং দ্বিতীয় দফার বৈঠক বিকাল পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত চলে। ২৯ মে আবারও বৈঠকে বসবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়ের অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সামাদ আজাদ কলকাতায় আটকা পড়েছিলেন।
বাংলাদেশকে মেনে নিয়েছি
পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি আব্দুল আলী খান ১৯৭২ সালের ২৭ মে পাকিস্তানে এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকৃতি দান এখন নিছক একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তিনি বলেন, পার্টির প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি প্রকৃতপক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের পৃথক হয়ে যাওয়াকে মেনে নিয়েছেন। কারণ, তিনি জানেন তার ক্ষমতা পূর্ব পাকিস্তান পর্যন্ত প্রসারিত নয়।’
‘বাংলা অ্যাকাডেমি আদেশ’ জারি
রাষ্ট্রপ্রধান কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড বাতিল ও বাংলা অ্যাকাডেমির সঙ্গে উন্নয়ন বোর্ডকে সংযুক্ত করে একটি আদেশ জারি করেন এই দিনে (২৭ মে)। এখন থেকে এই দুটি প্রতিষ্ঠান একটি সম্মিলিত সংস্থা ‘বাংলা অ্যাকাডেমি’ নামে অভিহিত হবে। খবরে বলা হয় যে, এই আদেশ ‘বাংলা অ্যাকাডেমি আদেশ ১৯৭২’ নামে অভিহিত হবে। আদেশটি ১৯৭২ সালের ১৭ মে কার্যকরী হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। নতুন আদেশ বলে অ্যাকাডেমি একটি সম্মিলিত সংস্থায় রূপান্তরিত হলো এবং স্থায়ী উত্তরাধিকার ও একটি অভিন্ন সিলমোহর ও অস্থাবর উভয় ধরনের সম্পত্তি দখল হস্তান্তরের ক্ষমতা লাভ করলো।