ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সর্বস্বান্ত পাবনার কলা চাষিরা
by ইমরোজ খোন্দকার বাপ্পি, পাবনাঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে পাবনার কলা চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাবনা সদরের হেমায়েতপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি কলা ক্ষেতে গিয়ে দেখে যায়, প্রায় সব গাছই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগানে দুমড়েমুচড়ে রয়েছে কলা গাছ। ফলন্ত এসব গাছের কলা আর মাসখানেক পরই পরিপক্ব হওয়ার কথা। সারা বছর খরচ করার পর ফসল ঘরে তোলার সময় এই ক্ষতি কলা চাষিদের সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে।
সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হেমায়েতপুর এলাকায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে এসব কলা বাগানের অধিকাংশ গাছই নষ্ট হয়ে গেছে। অপরিপক্ব কলা কেটে নিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। অনেকেই কলা চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এত বড় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সামর্থ্য নেই অধিকাংশ কৃষকের। তাই তারা সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, ইতোমধ্যে কলা চাষের সব ব্যয় শেষ করেছেন তারা। কেউ একশ’ বিঘা, কেউ দেড়শ’ বিঘা, আবার কেউ কয়েকশ’ বিঘা জমিতে কলার আবাদ করেছেন। অপেক্ষায় ছিলেন ঘরে তোলার। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পান সেই স্বপ্ন নিমিষেই নষ্ট করে গেছে।
কলা চাষি বজলুর রহমান বগা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'এবার একশ' বিঘা জমিতে প্রায় ৩৫ হাজার কলা গাছ লাগিয়েছি। সার, কীটনাশক, লেবার দিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকার মতো খরচ করেছি। ১১ মাস ধরে গাছের পরিচর্যা করেছি। আর এক মাস পরেই ফল পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আম্পানের আঘাত সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে। আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি।'
কলা চাষি আলম সরদার বলেন, 'আমার চার বিঘা জমিতে কলা বাগান। করোনার কারণে এত দিন কেউ কলা কিনতে আসেনি। রোজার মাসে কলা বিক্রি কেবল শুরু করেছি। আর এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় বাগান চুরমার করে দিলো। এখন আমি কী খাবো? আর কী পরবো? কিছুরই দিশা খুঁজে পাচ্ছি না।’
আরেক চাষি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, 'আমি ১৬০ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছি। করোনার কারণে এখনও কলা কাটিনি। জমি বর্গা নিয়ে এবং প্রায় দেড় কোটি টাকা ঋণ করে এই কলা চাষ করি। ঝড় আমাকে পথে বসিয়ে দিয়ে গেছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।'
হেমায়াতেপুর ইউনিয়ন কলা চাষি সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক জায়েদুল সরদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আমাদের এই অঞ্চলের বেশিরভাগ কৃষকই কলা চাষ করে জীবনধারণ করেন। আমাদের সমিতির ৭৭ জন কলা চাষি প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে কলা চাষ করেছেন। এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে কলা বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোটি কোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। সরকারের কাছে আমরা সহায়তা দাবি করছি।'
এদিকে, পাবনা জেলা কলা বাজার মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'কলার ব্যবসা মূলত তিন মাস। শীতকাল ডাল সিজেন। এ সময় কলা ব্যবসায়ী ও কলা চাষিদের কোনও ব্যবসা হয় না। এদিকে করোনার কারণে কলার ব্যবসায় মন্দা চলছে। রোজার মাসে কিছু ব্যবসা শুরু হয়েছিল। এর মধ্যেই প্রাকৃতিক দূর্যোগ আম্পান কলা চাষিদের অপূরণীয় ক্ষতি করে দিয়েছে।’
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ি, পাবনার উপপরিচালক ডা. আজহার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'পাবনা জেলায় এই মৌসুমে দুই হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ কলা কর্তন করা হয়েছে। বাকি কলাগুলো পরিপক্ব অবস্থায় বিক্রি করার মতো ছিল। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে প্রায় ৭০০ হেক্টর জমির কলা নষ্ট হয়ে গেছে। ঊর্ধ্বতন দফতরে রিপোর্ট করা হয়েছে। এটা অপূরণীয় ক্ষতি। সরকার কলা চাষিদের কোনও সহায়তা দিলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সহায়তা হিসেবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বিতরণ করা হবে।’