করোনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়
by বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্টকরোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সীমিত করেছে ঈদের আয়োজন। রবিবার (২৪ মে) জাতীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সবাইকে ঘরে বসে ঈদ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বা করোনা মোকাবিলায় সচেতনতা থেকে সোমবার (২৫ মে) ঈদের আয়োজন মুক্ত আকাশের নিচে না করে অনেকেই উদযাপন করেছেন চার দেয়ালের মাঝে। কেউ ছবি পোস্ট করে, কেউ খাবারের ছবি দিয়ে, কেউবা পরিবারের সঙ্গে ছবি তুলে সেটি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। পোস্টে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসির সম্পাদক জায়েদুল হাসান পিন্টু’র স্ত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শবনম আজিম ফেসবুকে পরিবারের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
লেখক সাদিয়া নাসরিন তার পরিবারের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন—‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে; তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।'
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মিডিয়া অ্যান্ড এক্সটার্নাল রিলেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান রাফি সাদনান আদেল তার সন্তানের হারমোনিয়াম বাজানোর একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন— 'ঈদ মোবারক! করোনায় ঈদকে আপন রঙে রাঙাতে সব ধরনের চেষ্টাই চলছে।'
বিবিসির সাংবাদিক সাইয়েদা আক্তার পরিবারের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন— ‘জীবন এখন এই রকমই আজব। গত ঈদে সকালে নাস্তা করে সেজেগুজে আব্বু-আম্মুকে দেখতে গিয়েছিলাম। আর কোনোদিনই আব্বুর সঙ্গে দেখা হবে না, আজ যাইনি মাকে দেখতেও। ঈদে আমার মেয়ে নতুন জামা চায়নি, বাইরে যাব বলে বায়নাও করেনি, কেবল নানুর বাসায় যেতে পারলে সে খুশি হতো। খাই-দাই, হাসিমুখে ছবি তুলি, ঘরেই কাটাই। এর মধ্যে সবাই নিরাপদে থাকুন এই প্রার্থনা করি। সবাইকে ঈদ মোবারক।'
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের (সিটিটিসি) প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে পরিবারের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন— ‘ছোটবেলায় সারাটা বছর জুড়ে রমজানের অপেক্ষা করতাম। রমজান এলেই ঈদ হবে, আর ঈদের পরিকল্পনাতেও ছিল প্রবল উত্তেজনা। কয়েক মাস ধরেই আব্বা-মার আলোচ্য বিষয় থাকতো নতুন জামা কেনার সম্ভাব্য ব্যয়। বছরে একবারই আমাদের জামা কেনা হতো। কেনা বললে ভুল হবে, মূলত কাপড় কিনে দর্জির কাছে পৌঁছানো হতো। দু’তিন দিন আগে থেকেই মহা উত্তেজনা বিরাজ করতো। সবাই ছিন্নি-সেমাই খেয়ে ঈদগাহে যেতাম। সন্ধ্যায় মন খারাপ হতো, এই বুঝি ঈদ শেষ হয়ে গেলো, আবার অপেক্ষা দু'মাসের, কোরবানির ঈদ। ঈদের সারা দিন আড্ডা দেওয়া, একটু ভালো খাওয়াই ছিল আমার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এখন ঈদের দিন আর আলাদা কিছু মনে হয় না; বরং অন্যদিনের চাইতে অনেক বেশি ব্যস্ত দিন কাটে। ছোটবেলার ঈদের সেই আনন্দ অনেক আগেই হারিয়ে গেছে।'
তিনি বলেন, 'এবারের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। টিভি খুললেই মৃত্যু আর আক্রান্তের সংবাদ, ফেসবুক কিংবা মোবাইলেও পরিচিত জনের সংক্রমণ কিংবা মৃত্যুর তথ্যে বিষণ্ন হই। মানুষের বিরহ-বেদনা, রোগ-ব্যাধি, মৃত্যু-শোক ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু বর্তমান সংকটতো কবেই অতীতকে ছাড়িয়ে গেছে। একদিকে কয়েকজন সহকর্মীদের মৃত্যু, অন্যদিকে অনেক সহকর্মী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে—মনটা এমনিতেই খারাপ থাকে, তারপর, গতকাল ইন্সপেক্টর রাজুর জানাজা পড়ার পর থেকেই খারাপ লাগাটা বেড়ে যায়। তবুও তো আজ সূর্য উঠেছে, ঈদ এসেছে, বন্ধু, সহকর্মী, আত্মীয় ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তবে, এবারের ঈদের একমাত্র শান্তির জায়গাটা হলো মা সুস্থ আছেন এবং পরিবারের সবাই একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। যে যেখানে আছেন, সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন। শত্রু-মিত্র, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী-অশুভাকাঙ্ক্ষী, পরিচিত-অপরিচিত—সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।'