রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড়রা করোনা আতঙ্কে, ঈদে শিশু-কিশোররা ঘুরেছে দলবেঁধে
by টেকনাফ প্রতিনিধিকরোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে ঈদুল ফিতরে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের শরাণার্থী শিবিরগুলোতে। সোমবার সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সেখানে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব এবং অন্যান্য নির্দেশনা তেমন একটা মানা হয়নি। এদিকে সোমবার পর্যন্ত কক্সবাজারের ২৯ জন রোহিঙ্গাসহ ৩৮১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে।
ঈদের দিন কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিশুরা সকাল থেকেই সেজেগুঁজে, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে মেতে উঠেছে। রোহিঙ্গারা অনেকে নতুন জামা, গেঞ্জি , লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি ও চশমা পরে দল বেঁধে শিবিরে বেড়াচ্ছে। এবারে শিবিরে নাগরদোলা, চড়কিসহ মিনি মেলা না বসলেও কিছু ক্যাম্পে খেলা বসিয়ে সেখানে ভিড় করছে রোহিঙ্গা শিশু-কিশোররা। তারা মানছে না নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব এবং অন্যান্য নির্দেশনাও।
রোহিঙ্গাদের মতে, কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ১ হাজার ২২০টি মসজিদ ও ৮৪০টি নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মক্তব) ও টেকনাফের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০টি, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩৪৫টি মসজিদ ও ৩০টি নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মক্তব) রয়েছে। এসব মসজিদ ও নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন শরণার্থী রোহিঙ্গারা।
টেকনাফের লেদা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘এবার ঈদের সকাল থেকে সেজেগুঁজে, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের শিশু-কিশোররা। তবে অন্যবারের মতো সেখানে কোনও ধরনের খেলার আয়োজন করতে দেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে তার ক্যাম্পে করোনা রোগী পাওয়ায় তারা খুব ভয়ে আছে। সরকারি যেসব নিদের্শনা সেটি সবাইকে পালন করতে মসজিদে মাইকিং করে বলা হয়েছে। বড়রা নিদের্শনা মানলেও শিশু-কিশোররা ঈদের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে করোনা থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করা হয়েছে। পাশপাশি নিজ ভূমিতে অধিকার নিয়ে ফিরে যেতে যেন পারি সেই প্রার্থনাও করা হয়েছে ঈদের জামাতে। তবু যতটুকু সম্ভব ক্যাম্পে করোনা রোধে সচেতনতা করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা সৈয়দ আলম বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে ক্যাম্পের লোকজন সচেতন না হলেও করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরই সেখানকার লোকজন ভয়ে আছে। কিন্তু ঈদে ছেলে-মেয়েদের ঘরে কোনো ভাবেই রাখা যাচ্ছে না। বড়ারা ঘরে থাকার চেষ্টা করলেও শিশু-কিশোররা এক ঘর থেকে অন্য ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বলতে গেলে ক্যাম্পে শিশু-কিশোররা ঈদের খুশি মতে উঠেছেন। সকাল থেকে তার দুই শিশু সন্তান বের হয়েছে এখনও বাড়ি ফিরেনি।
ঈদ উপলক্ষে ক্যাম্পে আগে থেকে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব এবং অন্যান্য নির্দেশনাও মেনে চলতে মাঝিদের কড়া নির্দেশনা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এসব নিদর্শনা যাতে যথাযত পালন হয় সেখানে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ) ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির বলেছেন, এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৯ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। সেখানে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব এবং অন্যান্য নির্দেশনাও মেনে চলা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নিপীড়নমূলক অভিযান শুরু করে। এর ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। পুরনোসহ উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি শিবিরে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।