ঈদের সেসব দিনরাত্রী
by আল সানিরমজান মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঈদের দিনক্ষণ গণনা শুরু করে দিতাম। অর্ধেক রোজা অবধি রোজা বাড়ত। তবে ১৫ রোজার পর থেকে রোজা কমতে শুরু করত আমাদের কাছে। ১৫ রোজা থেকে আমরা ভাইবোনেরা বলতাম আর মাত্র ১৫ দিন, ১৪ দিন, ১৩ দিন এভাবেই।
স্কুলের সামনের বই-এর দোকানগুলোয় চার রাঙা ঈদ কার্ড বিক্রি হতো। ৫ কিংবা ১০ টাকা এক–একটার দাম। স্কুলের সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের জন্য কিনে নিতাম সেসব কার্ড। স্কুল বন্ধ হওয়ার কয়েক দিন আগে থেকেই প্রতিটি পিরিয়ডে সবাইকে অগ্রিম ঈদ মোবারক জানাতে কখনো ভুল হতো না আমাদের। বিনোদন বলতে একমাত্র বিটিভিতে দেখাত সাত দিনব্যাপী ঈদ আয়োজন। সেসব ঈদের আগের দিন পর্যন্ত দেখে দেখেই মুখস্ত করে নিতাম। তারপর আরেকটু বড় হওয়ার পর গ্রামে স্যাটেলাইট চ্যানেলের দৌরাত্ম্য শুরু হয়।
ক্লাসের ফাকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় কোন চ্যানেলে কখন কোন হাসির নাটক দেখাবে, সেসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা আমাদের। তখন গ্রামীণফোনে ৫ টাকায় ২০০ এসএমএস কিনতে পাওয়া যেত। ঈদের চাঁদ দেখার পরপর দেওয়া শুরু হতো ছোট আকারে কবিতার ছন্দে লেখা শুভেচ্ছাবার্তাগুলো। এই এসএমএস লেখার জন্য ১২ টাকার এসএমএস বুক বিক্রি হতো দোকানে দোকানে। মাঝেমধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে এই ক্ষুদে বার্তাতেই কথা হতো সারা দিন। অন্য সময় বাড়ির বড়দের মোবাইলে হাত দেওয়া না গেলেও ঈদের কয়েকটা দিন কোনো একটা কারণে তারা কিছুই বলতেন না।
ঈদ উপলক্ষে পত্রিকার সঙ্গে তখন পাঠকসংখ্যা ও ঈদসংখ্যা বের হতো। দু-তিনটা সংখ্যা সংগ্রহ করে দুই দিনেই পড়ে শেষ করে ফেলতাম; এরপর সেই সংখ্যাগুলো আমার হাত থেকে বন্ধুদের হাতে যেত, তার থেকে আরেকজনের। এভাবেই হাতবদল হতে হতে আমার হাতে আর ফেরতই আসত না।
ঈদ সেলামির টাকা দিয়ে পুরাতন লাইব্রেরিতে গিয়ে সেবা প্রকাশনীর ছোট ছোট বই সংগ্রহ করার দারুণ একটা ঝোঁক ছিল আমার। কারণ, এই বইগুলো খুব সহজেই পাঠ্যবইরের ভাঁজে লুকিয়ে রেখে পড়া যেত। মায়ের হাতেও ধরা খেয়েছি অনেকবার, তবু সেবার কিশোর উপন্যাসগুলো খুব টানত সে সময়।
অন্য সব দিনে সন্ধ্যার পর বাইরে থাকা ভীষণ অপরাধ বলে গণ্য হলেও ঈদের দিন বেশ অনেকটা সময় বাইরে থাকা যেত। এ সময়ে কাটানো সুখস্মৃতি কেউই কখনো ভুলতে পারবে না।
সেসব দিনে ঈদ মানে শুধুই আনন্দই ছিল; ধরা বাধা কোনো নিয়ম নেই, কোনো পিছুটান নেই, কে কী বলবে সেসব ভাবনা নেই। তবে সেসব দিনে আমার সোনার খাঁচায় আর রইল না কারণ যায় দিন ভালো আসে দিন একটু কম ভালো।
*লেখক: শিক্ষার্থী, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়