স্ত্রীর হাতে রান্না খাবার করোনায় মৃত ব্যক্তিদের বাড়ি পৌঁছে দিলেন ইউএনও

by

ফজর নামাজ আদায় করেই ঘরোয়াভাবে আয়োজন শুরু। নিজের পরিবারসহ আরো চারটি পরিবারের জন্য বিশেষ খাবার তৈরি করছেন সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্ত্রী। আজকের দিনটা অন্য রকম বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে পবিত্র ইদুল ফিতর। তাই আয়োজনটা ঈদের। করোনায় সোনারগাঁয়ে যে পাঁচজন মারা গেছে তাদের পরিবারের জন্য নিজ হাতে রান্না করছেন তিনি। অন্যদিকে ইউএনও সাইদুল ইসলাম নামাজের প্রস্ততি নিচ্ছেন। নামাজ শেষে অভিভাবকহীন পরিবারে খাবার ও উপহার সামগ্রী পৌঁছে দিবেন।

সোনারগাঁ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম সোনারগাঁয়ে করোনা যোদ্ধা ও মানবিক ইউএনও হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাঁর পৌঁছাতে, সুখ দুখের কথা বলতে কোন কলিংবেল টিপতে হয় না। দরজা খোলা। তাই সরাসরি গিয়ে সবার সমস্যার কথা বলতে পারেন। আর সমাধান পান খুব সহজে। 

করোনাকালে জনসচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব, নিয়ম করে হাতধোয়া প্রশিক্ষণ, মাস্ক এবং হ্যান্ডগ্লাবস বিতরণ, বাজার মনিটরিং করা এবং কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। আর এ সব কিছু করার জন্য তিনি গঠন করেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী টিম। ঈদের আগের দিন তিনি সাংবাদিক নেতা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও এলাকার সুশীল সমাজকে যায়নামাজ উপহার দিয়েছেন।

ঈদের নামাজ শেষে তিনি রান্না করা খাবার নিয়ে মোগরাপাড়া, কাঁচপুর, শম্ভুপুরা ও সনমান্দী ইউনিয়নে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য খাবার ও উপহার সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তাদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।

সোনারগাঁয়ে প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া আব্দুর রহিমের স্ত্রী জানান, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি দুটি সন্তান নিয়ে বুকফাটা কষ্ট নিয়ে কাটিয়েছি। কাউকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে পারিনি। কেউ আমাদের এতটুকু স্বান্তনা দিতে আসেনি। আমার স্বামীর লাশটা পর্যন্ত কেউ কবর দিতে আসেনি। সেদিন ইউএনও স্যার লাশ দাফন করেছে, আমাদের সান্তনা দিয়েছে। সুস্থ থাকার জন্য পরামর্শ দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করেছে। আমার করোনা পজেটিভ হওয়ার পর এসিল্যান্ড স্যার আমার ও আমার দুটি অবুঝ সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছে। আজ ঈদের দিন আমাদের জন্য রান্না করা খাবার নিয়ে এসেছে। যা দেখে আমার চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি।

ইউএনও সাইদুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবারের জন্য আমি যতটা ভাবি তাদের জন্য এরচেয়ে বেশি ভাবনায় থাকি। করোনায় মৃত্যুর কারণে কেউ তাদের কাছে আসে না, কথা বলে না। তাই ঈদের দিনের পুরো সময়টা আমি পরিবারগুলোর পাশে থেকে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এসেছি। মানুষের জন্য সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিতে না পারলে কিসের মানুষ আমি।