![https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/c6fac52fd6aab7325ea445c9891109d6-5ecbf17b50e4c.jpg https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/c6fac52fd6aab7325ea445c9891109d6-5ecbf17b50e4c.jpg](https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/c6fac52fd6aab7325ea445c9891109d6-5ecbf17b50e4c.jpg)
ঘুরে দাঁড়িয়েছে সুতারখালী ও কামারখোলার মানুষেরা
by উত্তম মণ্ডল, খুলনার দাকোপ থেকেঘূর্ণিঝড় আইলায় হারিয়েছিলেন ঘরবাড়ি। এরপর বেড়িবাঁধের ওপর আড়াই বছর কাটিয়ে ভিটেয় ফেরেন। বাড়িঘর আবার তৈরির পর নিজ আঙিনায় গড়ে তুলেছেন বেশ বড়সড় বাগান। সেখানে কমপক্ষে ৪০টা গাছে বিভিন্ন প্রজাতির কাঁচা-পাকা আম ঝুলছে। গাছে ধরে আছে বেল, জামরুল, কাঁঠাল, পাকা পেঁপে। গতকাল রোববার বিকেলে ছোট ছোট ঝোপালো সেসব গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিলেন কানাইলাল মণ্ডল।
কানাইলাল বলছিলেন, আইলার পর এলাকায় অনেক সবুজায়ন ঘটেছে। লবণ পানির ঘেরের সময়কার রুক্ষতা আর নেই। প্রতিটি বাড়িতেই ফল-ফুল-সবজির খেত বাড়ছে। মানুষ নানা ফসল ফলাচ্ছে। আইলায় নানা ক্ষতির পরও ভালোটাও কম হয়নি।
কানাইলালের বাড়ি দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের সুতারখালী পূর্বপাড়া গ্রামে। ঠিক ১১ বছর আগে (২০০৯ সালের ২৫ মে) প্রলয়ংকরী আইলায় খুলনা জেলার মধ্যে দাকোপের ৩২ নম্বর পোল্ডার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ওই পোল্ডার সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ওই এলাকার বেশির ভাগ বাড়িঘর বিলীন হয়ে যায়। দীর্ঘদিন লবণাক্ত পানি আটকে থাকায় গাছপালাও মরে যায়। তখন মানুষের ঠাঁই হয় বেড়িবাঁধে।
![https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/56a3a812b9d5270b037f82319961073a-5ecbf17d62a2f.jpg https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/56a3a812b9d5270b037f82319961073a-5ecbf17d62a2f.jpg](https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/56a3a812b9d5270b037f82319961073a-5ecbf17d62a2f.jpg)
২৩ ও ২৪ মে দাকোপের ওই দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে, সাধারণ মানুষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার এলাকায় নতুন করে যে সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ করছে, তা প্রায় শেষের পথে। যে নলিয়ান নদীর বাঁধ ভেঙে ঘটনা ভয়াবহতায় রূপ নিয়েছিল, সেই নদীর মুখ সম্প্রতি বন্ধ করা হয়েছে। তীর সংরক্ষণ করে ওই বাঁধ আরও শক্তিশালী করার দাবি আছে।
এলাকায় যে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে, সেই বাঁধে ঘাস লাগানো কর্মীদের একজন রহিমা বেগম। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এই এলাকার নারীরা এখন ঘরের বাইরের প্রচুর কাজ করছে। মাছ চাষ, কাঁকড়ার হ্যাচারি, কৃষি এবং কৃষিশ্রমিক হিসেবে সরাসরি কাজ করছে। পড়ালেখা করছে, বাল্যবিবাহ কমেছে। নারীদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতাও বেড়েছে। বিভিন্ন সভায় নারীদের অংশগ্রহণও বেড়েছে।
এই এলাকায় যুগের পর যুগ মাটির দেয়াল তুলে ঘর তৈরির প্রচলন ছিল। কিন্তু আইলায় নদীর বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে মাটির বাড়িগুলো ধসিয়ে দিয়েছিল। কষ্ট করে হলেও সেখানকার মানুষ পাকা বা আধা পাকা ঘর তৈরি করছে। আর যাঁরা পারছেন না, তাঁরা ঘরের খুঁটি দিচ্ছেন কংক্রিট দিয়ে।
![https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/fceb6b67890727a659479f5c19cac13a-5ecbf17f63bab.jpg https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/fceb6b67890727a659479f5c19cac13a-5ecbf17f63bab.jpg](https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/fceb6b67890727a659479f5c19cac13a-5ecbf17f63bab.jpg)
স্থানীয় সংবাদকর্মী আজিজুর রহমান বলেন, আইলার পর এলাকার চেহারা অনেকটা বদলে গেছে। বাঁধ হয়েছে। প্রায় বাড়িতে এখন গরু, বাছুর আছে। প্রথা অনুযায়ী মাটির ঘরের বদলে মজবুত ঘর বানানোর দিকে ঝুঁকছে মানুষ। গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ এসেছে। পানির সংকট আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের প্রবণতা বেড়েছে। সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও নামমাত্র, কখনো বিনা মূল্যে পানির ট্যাংকি দিচ্ছেন।
গুনারী শীতল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আদিত্য নারায়ণ সরদার বললেন, আগে ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পেলেও মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইত না। এখন প্রায় প্রতিটি পাড়ায় আশ্রয়কেন্দ্র আছে। মানুষের ভিটা না ছাড়ার ওই প্রবণতাও কমেছে।
আইলার আগে উপজেলার সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নে অধিকাংশ কৃষিজমি একফসলি ছিল। ২০০৭ সাল পর্যন্ত এখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ জমিতে লোনা পানির চিংড়ি চাষ হতো। পরিবেশ বিপর্যয়সহ বেশ কিছু কারণে ওই চাষ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর একমাত্র আমন ধানই ছিল ভরসা। তবে লবণ পানিতে দীর্ঘকাল চিংড়ি চাষের ফলে আমনের উৎপাদনও ভালো হতো না। এরপর বড় ধাক্কা আইলা। প্রায় আড়াই বছর মানুষ বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করতে বাধ্য হয়। জমিতেও একদানা ফসল কেউ করতে পারেনি।
এখন সারা বছর বাড়ির আঙিনায় সবজির চাষ হচ্ছে। এতে ভেষজ কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। কেঁচো সার, কম্পোস্ট সারের ব্যবহারও নজর কাড়ার মতো।
বছর দুই ধরে ওই দুই ইউনিয়নে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রচুর পুকুর খনন করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের জন্য চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাটি নেওয়ায় এলাকার অনেক মানুষের পুকুর খনন হয়ে গেছে। এতে স্বাদু পানির মাছ চাষ ব্যাপক বেড়েছে।
![https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/749e4eca9bcbbdc0304fd20229fa4b21-5ecbf18143416.jpg https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/749e4eca9bcbbdc0304fd20229fa4b21-5ecbf18143416.jpg](https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/749e4eca9bcbbdc0304fd20229fa4b21-5ecbf18143416.jpg)
কামারখোলা ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের বসিন্দা শিক্ষক শ্যামল কান্তি জোয়াদ্দার এ বছর তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে প্রায় আড়াই লাখ টাকা পেয়েছেন। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে এলাকায় ফসল চাষের বৈচিত্র্যতা চোখে পড়ার মতো। একসময় ভাবাই যেত না এই এলাকায় তরমুজ, বোরো ধান চাষ সম্ভব। আইলার কারণে জমি উর্বর হয়েছে। বড় খালে বাঁধ দিয়ে মিষ্টি পানির আধার তৈরি করা হয়েছে।
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ওই এলাকায় আমন নির্ভরতা কমছে। মানুষ নানা ফসলের দিকে ঝুঁকছে। আইলা বিধ্বস্ত সুতারখালী ও কামারখোলাতেও বোরো, তরমুজ, আমনসহ নানা ফসলের সমারোহ।
সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, আইলার পর পুরো এলাকা প্রায় আড়াই বছর পানিতে ডুবে ছিল। এখনো বেশকিছু সমস্যা আছে। তবে আইলার ১১ বছর পর এলাকায় অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সচেতনতা সবই বেড়েছে।