মাগুরায় ঈদের নামাজ থেকে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের ঘটনায় আটক ৮
by মাগুরা প্রতিনিধিমাগুরার শ্রীপুরে ঈদের জামাতে সংঘর্ষ এবং অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে একটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনার জন্য একে অপরকে দায়ী করে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে দু’পক্ষ।
খর্দরহুয়া গ্রামের আবু সালেহসহ অন্যরা জানান, আজ সোমবার ৯ টায় খর্দরহুয়া মসজিদে ঈদের নামাজের সময় খুতবা শেষে মোনাজাতের আগে মসজিদের উন্নয়নের জন্য টাকা তোলা হচ্ছিল। এসময় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে বক্কার মোল্যা ও নুরুল শেখ নামে স্থানীয় দু’গ্রাম্য মাতবরের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তখন নামাজের ভেতরেই কয়েকজন আহত হন। ইমাম তড়িঘড়ি করে মোনাজাত শেষ করা মাত্র উভয় পক্ষে আবারও কথা কাটাকাটিহয়। এরপর হাতাহাতিসহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। মসজিদেই ঘটা ওই হামলায় গ্রামের ওসমান মিয়া (৩৫), নুরুল শেখ (৫০), সোহাগ (১৬), জুয়েল (২৮), ইউনুছ (৩৫), হারেজ শেখ (৬০), সুফিয়া (১৪) নামে এক কিশোরীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। এরপর এছাড়া শ্রীকোল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আমির হোসেন মোল্যার বাড়িসহ শলইনগর ও খর্দরহুয়া এলাকার অর্ধশতাধিক বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। আহতদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এলাকাবাসী আরও জানান, মসজিদে হাতাহাতিতে অংশ নেয়া গ্রাম্য মাতবর বক্কার মোল্যা স্থানীয় শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাসিম বিল্লাহ সংগ্রামের সমর্থক। অন্যদিকে, নুরুল শেখ শ্রীকোল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আমির হোসেন মোল্যার সমর্থক। স্থানীয় রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে উভয় সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে।
এদিকে, এ ঘটনার বিষয়ে মোস্তাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম ও আমির হোসেন মোল্যা নামের ওই দুই নেতা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন।
এটিকে শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম ও তার সমর্থকদের পূর্ব পরিকল্পিত হামলা হিসেবে দাবি করেছেন শ্রীকোল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আমির হোসেন মোল্যা। তিনি বলেন,‘পূর্ব পরিকল্পিতভাবে চেয়ারম্যান সংগ্রাম ও তার লোকজন প্রথমে আমার সমর্থক নুরুল শেখসহ অন্যদের ঈদের নামাজ চলাকালে মসজিদের ভেতরেই জখম করে। পরে মুহূর্তের মধ্যে অন্য গ্রামের কয়েকশ’ লোক ডেকে এনে আমাদের ওপর আবারও হামলার পাশাপাশি বাড়িঘরে লুটপাট করে। আমি কিংবা আমার সমর্থকরা কোনও সংঘর্ষে জড়াইনি। বরং অতর্কিত হামলা ও ভাঙচুরের শিকার হয়েছি। এটি সংগ্রাম চেয়ারম্যানের পূর্ব পরিকল্পিত হামলাই যদি না হবে তাহলে ঈদের দিন মুহূর্তের মধ্যে এত লোক এনে হামলা চালানো কীভাবে সম্ভব হলো?’
এ বিষয়ে শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম বলেন,‘এটি মসজিদে ঈদের নামাজ পড়া নিয়ে গ্রাম্য দুই মাতবরের বিরোধ। এখানে আমার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। বরং আমি খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দু’পক্ষকে নিবৃত্ত করেছি। আহতদের মাগুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
শ্রীপুর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মাহাবুবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন,‘সংঘর্ষের খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ অন্তত ৫০ রাউন্ড শটগানের ফাঁকা গুলি চালায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। সহিংসতা এড়াতে এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরা রয়েছে।’