‘সব দিন এক করে দিয়েছে করোনা’

by
https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/34de33cde96a4fdaa97d8e13b9dcbff3-5ecbd467b556b.jpg
করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবন আর পুরাতন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ডেডিকেটেড করা হয়েছে। নতুন ভবনে তিন শিফটের প্রতি শিফটে ২০ জন করে চিকিৎসক কাজ করেন। আজ সোমবার (২৫ মে) ঈদের দিনেও সে নিয়মের ব্যত্যয় হয়নি।
সকাল ৮টা থেকে প্রথম শিফটের কাজ শুরু হয়। দুপুর দেড়টায় শুরু হয় দ্বিতীয় শিফটের কাজ। দ্বিতীয় শিফটে কাজ করছেন ডা. মুহিত কুমার প্রমানিক, ডা. সৈকত, ডা. প্রিয়াঙ্কা বকসী ও ডা. অনলসহ অন্যরা। সকালের শিফটে কাজ করেছেন ডা. আহসানুল মতিন সৈকত। ডা. আহসান ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের রোগী। বাসায় ছোট দুই সন্তান। অথচ কোভিড পরিস্থিতিতে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন এ হাসপাতালেই।

ডা. আহসান বলেন, আমরা তো বাসাতেও যেতে পারি না। আর সকাল সাড়ে সাতটায় কোভিড ডেডিকেটেড চিকিৎসকদের নিয়ে গাড়ি চলে আসে হাসপাতালে। ঈদের দিনে নামাজও পড়তে পারিনি। আবার কোভিড হাসপাতালে যারা কাজ করছেন তারা ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষ না করে বাসায় যেতে পারেন না ।

ঈদের দিনে ছুটির সময়ে কাজ করতে কেমন লাগে জানতে চাইলে ডা. মুহিত বলেন, নন মুসলিম হিসেবে প্রতিবারই ঈদের ডিউটি করতে হয়, কিন্তু এবারের চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন, অভিজ্ঞতাও ভিন্ন। এবারে সবাই ডিউটি করছেন রোস্টার অনুযায়ী। আর রোগীদের ভেতরেও ভীতি-আতঙ্ক বেশি, আমরা সাহস দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু তাতেও কী খুব বেশি কিছু হয়? আসলে এমন পরিস্থিতি, এমন চিত্র আগে দেখিনি। আত্মীয়-স্বজন রোগীকে দেখতে পারছে না, তারা রোগীর কাছে যেতে পারছেন না, একটু ছুঁয়ে সাহস দিতে পারছেন না—তাই আমরা চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া সবাই মিলেই এখন এই কাজটা করছি। সাহসের সঙ্গে সঙ্গে যতটুকু সম্ভব আমাদের পক্ষে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/e23109ddcab7417e71faedffabfd7337-5ecbd466495f6.jpg

কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর মধ্যে অন্যতম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) সকাল থেকে কাজ করছেন বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদ হোসেন মাসুম ও তার সহকর্মীরা।

ডা. শাহজাদ হোসেন বলেন, আমার মতোই শত চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, ওয়ার্ড বয়, আয়া, ক্লিনার আজ দেশের নানা হাসপাতালে ব্যস্ত দিন পার করছেন। করোনাভাইরাসের এই মহামারি আমাদের সবদিন এক করে দিয়েছে।  বেশিরভাগই মন খারাপ করারও সময় পাননি।

তিনি বলেন, শতকোটি অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে। আমরা রোগী দেখি না, কাজ করি না, গ্রামে যাই না। পালিয়ে গেছি, রোগীর কাছে যাচ্ছি না, ঢিল দিয়ে ওষুধ দেই। তারপরও প্রতিটা হাসপাতালে প্রতিটা শিফটে সব স্টাফ উপস্থিত। সবাই কাজ করছেন। এমনকি ৩৯তম বিসিএসে যারা যোগদান করেছেন তারাও একমনে কাজ করে যাচ্ছে। রোগীদের অনেকেই বাড়ি ফিরছেন। অনেকের অনেক অভিযোগ, আবার অনেকের অনেক প্রশংসা। আমরা কারও কাছে কিছু চাইনি, চাইবোও না। ডা. শাহজাদ বলেন, সামনের সময় কেমন হবে জানি না। হয়তো কঠিন। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের এমন বোঝা না দেন যা আমরা বহন করতে পারবো না।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/255ecdf8e809991c81b795677ad037eb-5ecbd4676e5d4.jpg

রাজধানীর শের-ই বাংলা নগরে অবস্থিত পঙ্গু হাসপাতাল (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) এ  ঈদের দিনে কেবলমাত্র একটি অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচার হয়েছে ২০টি। এর মধ্যে সাতজনই শিশু, তারা হাত পা ভাঙা অবস্থায় এসেছে। এই মহামারি পরিস্থিতিতেও জরুরি বিভাগে যে পরিমাণ রোগীর চাপ ছিল ঈদের দিনে সেটা কল্পনার বাইরে মন্তব্য করে ডা. শুভপ্রসাদ বলেন, ছুটির এ সময়ে এমন সড়ক দুর্ঘটনার রোগী পেয়ে  মন খারাপ হয় আমাদের। এই মহামারির দিনে যেখানে সবার জন্য ঘরে থাকার কথা সেখানে তরুণরা মোটরবাইক নিয়ে বাইরে বের হচ্ছে, আর ফাঁকা রাস্তায় দুর্ঘটনাও ঘটছে।