জরুরি অবস্থার আওতামুক্ত হলো জাপান
by মনজুরুল হক, টোকিওজাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে রাজধানী টোকিওসহ পাঁচটি জেলা থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ সোমবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে শিনজো এ ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিনজো বলেন, মাত্র দেড় মাসের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য জরুরি অবস্থা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা তিনি আর দেখছেন না।
এর আগে জাপান সরকারের একটি উপদেষ্টা প্যানেল গত এক সপ্তাহে নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা, চিকিৎসাব্যবস্থার সহজলভ্যতা, ভাইরাস পরীক্ষা চালানোর সামর্থ্য এবং সংক্রমণের ওপর নজর রাখার ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছিল।
সারা দেশ থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হলেও প্রধানমন্ত্রী শিনজো জীবনধারা পরিবর্তনের দিকনির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান নাগরিকদের প্রতি।
এসব নির্দেশনার মধ্যে আছে বাইরে বের হওয়ার সময় সার্বক্ষণিকভাবে মাস্ক পরে থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ঘরে থাকা অবস্থায় কাজ সেরে নেওয়া। এসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা বজায় না রাখা হলে করোনাভাইরাসের আরেকটি তরঙ্গের আঘাত নিয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাপানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়েছিল জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে। ১৩ ফেব্রুয়ারি ভাইরাস সংক্রমণে জাপানে প্রথম মৃত্যু রেকর্ড করা হয়। এরপর থেকে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার দৈনিক হিসাব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ অবস্থায় এপ্রিলের ৭ তারিখে সরকার টোকিও এবং আরও কয়েকটি জনবহুল জেলায় এক মাসের জরুরি অবস্থা জারি করে। এর কিছুদিন পর জরুরি অবস্থা সারা দেশে সম্প্রসারিত করা হয়।
চলতি মাসের ৬ তারিখে প্রথম দফার জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষ হলেও ৩১ মে পর্যন্ত তা বাড়ানো হয়। কিন্তু পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাওয়ায় শুরুতে ৩৯টি জেলা থেকে জরুরি অবস্থা সরকার তুলে নেয়। এরপর গত সপ্তাহে সেই তালিকায় আরও তিনটি জেলা যুক্ত হয়। সর্বশেষ আজকের সিদ্ধান্তের ফলে নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক সপ্তাহ আগেই সারা দেশ এখন জরুরি অবস্থামুক্ত হলো।
জরুরি অবস্থা উঠে যাওয়ায় প্রায় তিন মাস ধরে থমকে থাকা বাণিজ্যিক কার্যক্রম জাপানে পুরোদমে শুরু হওয়ার পথ খুলল। তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্কতামূলক জীবনযাপনের দিকে ঝুঁকে পড়ায় আগের জীবনে জাপান হয়তো শিগগিরই ফিরবে না। ফলে অর্থনীতির হুমকি দূর হতে আরও কিছুদিন জাপানকে অপেক্ষা করতে হতে পারে।
জরুরি অবস্থা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলেছে উত্তরের জেলা হোক্কাইডো ছাড়াও রাজধানী টোকিও ও আশপাশের তিনটি জেলা—কানাগাওয়া, সাইতামা ও চিবায়। এই চারটি জেলায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষের বসবাস এবং এখানকার সম্মিলিত মোট বার্ষিক উৎপাদন হচ্ছে ১৮২ লাখ কোটি ইয়েনের বেশি বা আনুমানিক ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার। সেই হিসাবের দিক থেকে এটা হচ্ছে বিশ্বের একাদশ বৃহত্তম অর্থনীতি।
করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থমকে দাঁড়ানোয় বিশাল এই অর্থনীতির ওপর পড়া ক্ষতিকর প্রভাব সারা দেশকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। সেই জের কাটিয়ে ওঠার জন্য নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণের চিন্তাভাবনা সরকার ইতিমধ্যে শুরু করলেও করোনা সংক্রমণের আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়েও সরকারকে সতর্ক থাকতে হচ্ছে। ফলে জরুরি অবস্থা উঠে গেলেও জাপানের অর্থনীতির জন্য উত্তাল সময়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যাওয়া কোনো অবস্থাতেই তা বোঝাচ্ছে না। বিশ্লেষকদের অনেকে বরং বলছেন আগামী দিনগুলো হবে অর্থনীতির জন্য আরও বড় পরীক্ষার সময়। সেই পরীক্ষায় জাপান উত্তীর্ণ হতে পারবে কি না, তা কেবল জাপানের একার ওপর নয়, বরং একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর অনেক বেশি নির্ভর করবে।