প্রবাসে শেষ মুহূর্তে জামাতে নামাজ
by মো. মোজাম্মেল হোসেন সিক্ত, ইতালি থেকেইতালিতে লকডাউন শিথিল হয়েছে। তবু এবারের ঈদুল ফিতরের নামাজ জামাতে পড়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। এমনকি গত শনিবার রাত পর্যন্তও নিশ্চিত ছিলাম না ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে কি না। রাতেই অবশ্য বন্ধু অপু জানাল ‘ত্রেইস্তাভেরে’-তে তার কয়েক বন্ধু মিলে ঈদের জামাত আয়োজনের চেষ্টা করছে। তারা ইতিমধ্যে পুলিশ কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি নিয়েছে। তবে মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার শর্ত দেওয়া হয়েছে।
রোমে ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত হয় যেখানে, সেখানে এবার জামাত হচ্ছে না। বাঙালি–অধ্যুষিত ভিক্টোরিয়া এবং বড় মসজিদে জামায়াত না হওয়ায় অনেকেই নিজের বাসায় নামাজ পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমার মন অবশ্য একটু খচখচ করছিল যে ঈদের নামাজ পড়া হবে না! আবার করোনা মহামারির কথা মনে রেখে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম, যে সবার নিরাপত্তার স্বার্থেই না হয় এবার জামাতে না গেলাম।
রোববার সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠার পড়েই দেখলাম যে বাঙালি পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করছি তারা বিভিন্নজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজ নিচ্ছেন কোথায় জামাত হবে। পরিশেষে, ত্রেইস্তাভেরেতেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। বাংলাদেশের মতো এতটা উৎসব ভাব এমনিতেই এসব দেশে থাকে না, আর এবার তো পরিস্থিতিই সবার প্রতিকূলে।
সকালে গোসল সেরে পাঞ্জাবি পরে বাসার ৫ জন মাস্ক, গ্লাভস, জায়নামাজ নিয়ে ঈদের নামাজ পড়ার উদ্দেশে বের হলাম। ত্রেইস্তাভেরের ‘পিয়াচ্ছা মাস্তাই’ নামক একটা জায়গায় নামাজের আয়োজন করা হয়েছে। এটি ঈদগাহ বা খোলা মাঠ নয়, সরকারি অফিসের সামনের চত্বর। আমরা যখন পৌঁছালাম, ততক্ষণে সেখানে পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেখলাম সেখানে পুলিশ সদস্য কয়েকজন দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং আয়োজকদের কয়েকজন সিরিয়াল ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করছেন।
ষষ্ঠ জামাতে নামাজ পড়তে দাঁড়ালাম। সবার মধ্যে অন্তত এক মিটার শূন্যস্থান বা দূরত্ব। এক কাতারে ১১ জন এবং মোট আটটি কাতারে জামাত অনুষ্ঠিত হলো। নামাজ শেষে খুতবাহ ও সংক্ষিপ্ত মোনাজাত। তারপর আবার শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বেরিয়ে যাওয়া। ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি করে অভ্যস্ত সবাইকে সতর্কভাবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে—এমন ঈদ এবারই প্রথম। শুধু কি তাই! ঈদে প্রত্যেকেই পরিচিতজনদের দাওয়াত করে থাকেন। এখানে বাঙালিদের মধ্যেও এ রীতি আছে, কিন্তু এবার সেসব রীতি থেকেও সবাইকে দূরে থাকতে হচ্ছে। সবার মুখে যেন একই ধ্বনি—সবাই সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারলে আগামী বছর না হয় আবার আগের মতো হবে।