https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/a3ad20d63924cd182c3fa6e1b8c1a445-5ecbc0d835a92.jpg
ঘরবন্দী ঈদ। ছবি: সংগৃহীত

করোনাকালে ঘরবন্দী ঈদ

by

আহারে এমন ঈদও এল পৃথিবীতে! নেই হাত মেলানো, নেই কোলাকুলি! নেই নতুন পোশাক! নেই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে ছবি তোলাতুলি। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ছবি তুলতে না পারলেও আমরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ছবি তুলে করোনাকালের ঈদের স্মৃতি ধরে রেখেছি মাত্র।
প্রতিবছর ঈদে আমরা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করি হাত মিলিয়ে, কোলাকুলি করে। প্রতিবার ঈদের নামাজ ও মোনাজাত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈদের মূল আনন্দ উৎসব শুরু হয় কোলাকুলি দিয়ে। কিন্তু এবার মহামারি করোনাকালে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে সম্পূর্ণ অচেনা এক পরিবেশে। আমরা কখনো প্রস্তুত ছিলাম না এমন ঈদ উদযাপনের জন্য। নতুন জামা ছাড়া, হাত মেলানো ছাড়া, কোলাকুলিহীন এ এক নিরানন্দের ঈদ।
ঈদে ছোটদের কাছে নতুন জামা আর বড়দের কাছে কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় ও পায়ে ধরে সালাম করে মুরব্বিদের কাছ থেকে দোয়া নেওয়া, ঘরে ঘরে গিয়ে ঈদের মজাদার খাবার খাওয়া, হাত ধরাধরি করে দলে দলে ছোটদের বেড়ানো বাঙালি মুসলমানের চিরচেনা সংস্কৃতি। এতেই আমরা ঈদ আনন্দ উপভোগ করে আসছি চিরকাল।
কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাস এসে এবার আমাদের ফেলেছে এক কঠিন অবস্থায়। ঘরবন্দী পরিস্থিতিতে করোনা দিনের ঈদ সীমাবদ্ধ থাকছে কেবল অনলাইনে। অনলাইনে শুভেচ্ছা বিনিময়, সালাম-দোয়া, ঈদ মোবারক জানিয়েই অপরের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে আজ। বলা যায় এবারের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হচ্ছে ভার্চ্যুয়াল জগতে। আমরা সবাই এখন ভার্চ্যুয়াল জগতের বাসিন্দা হয়ে গেলাম।

https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/05/25/b64e2f775db231780e22f3eab020e613-5ecbc0dd788b4.jpg
মসজিদে ঈদের নামাজের পর ছবি তোলা। ছবি: সংগৃহীত

আমরা চাই না শুধু এমন শুভেচ্ছা বিনিময়। এমন পরিস্থিতি এমন ঘরবন্দী ঈদ আর না আসুক মানবজীবনে। তাই এই করোনাকালের ঈদের প্রধান প্রার্থনা হচ্ছে, ‘পৃথিবী করোনামুক্ত হোক’। এক ভাইরাসের কারণে মানবজাতির এমন কঠিন পরিস্থিতি দেখতে ভালো লাগছে না মোটেই। করোনা আমাদের ঘরবন্দী করে রাখার পাশাপাশি বঞ্চিত করছে একের পর এক আনন্দ–উৎসব থেকে। আমাদের সম্মিলিত প্রার্থনা করাতেও বাধা এই করোনা।
ঈদ আনন্দের সব অনুষঙ্গ থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে এই করোনাভাইরাসের কারণে। ঈদে মহাসমারোহে হইচই করে ছুটে বেড়ানো শিশুরাও আজ ঘরবন্দী। এর চেয়ে কষ্ট আর কী হয়? ঈদ আনন্দের সব অনুষঙ্গ ত্যাগ করেও যদি পৃথিবী থেকে করোনা বিদায় নিত, তাহলে শান্তি পেত মন। অথচ আমরা এখনো ধারণাও করতে পারছি না কবে এই করোনাভাইরাস বিদায় নেবে মানবজাতির কাছ থেকে। পৃথিবী থেকে করোনার বিদায়ে মানুষ ঈদের আনন্দের চেয়ে বেশি আনন্দিত হবে। এবং সেই আনন্দই পৃথিবীর বুকে আসুক দ্রুত, এটা এই করোনা দিনের ঈদ প্রত্যাশা।
দূরের, কাছের পরিচিত–অপরিচিত যাঁরা এই লেখা পড়ছেন, সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক।
লেখক: প্রাবন্ধিক