সর্বজনীন ঈদ এখন পরিবারকেন্দ্রিক
by প্রতিনিধি, পিরোজপুরপিরোজপুর শহরের মাছিমপুর মহল্লার বাসিন্দা আইনজীবী রেজাউল ইসলাম। একান্নবর্তী পরিবারের ১৯ জন সদস্য নিয়ে বাড়ির ছাদে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। নামাজের ইমামতি করেছেন ওই পরিবারের ছোট ছেলে মইনুল ইসলাম। নামাজ শেষে বাড়িতেই শিশুরা আনন্দ–উল্লাস করে। দুপুরে ভালো খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হয়েছে। তবে সবকিছুই শুধু পরিবারের সদস্যদের জন্য। বন্ধু, আত্মীয়স্বজন কেউ তাঁদের বাড়িতে আসেনি। করোনা পরিস্থিতির কারণে সর্বজনীন ঈদ এবার উদ্যাপিত হচ্ছে ঘরোয়া পরিবেশে।
মসজিদে ঈদের জামাতগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করা হয়। বেশির ভাগ মানুষ বাড়িতেই ঈদের নামাজ আদায় করেন। পারিবারিক আবহে উদ্যাপিত হচ্ছে ঈদ।
পিরোজপুর শহরের মাংসের দোকানগুলোতে ছিল সকাল থেকে ভিড়। মুরগি ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বলেন, এবার ঈদে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেচাবিক্রি কম। তবে কিছু মানুষ ঈদ উপলক্ষে মুরগি কিনছেন। ঘরোয়া পরিবেশে ঈদ উদ্যাপিত হওয়ায় প্রত্যেক পরিবারের আয়োজনও কম।
তবে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে উপকূলীয় এলাকার দুর্গত মানুষ এবার ঈদ উদ্যাপন করছে না। মঠবাড়িয়া উপজেলার খেতাছিঁড়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বইন্ন্যায় ঘরে চাউল, তেল, নুন, মরিচ সব ভাইস্যা গ্যাছে। ত্রাণ খাইয়া বাঁইচা আছি। মোগ আবার ঈদ কিসের।’
মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাহাবুব আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বলেশ্বর নদের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় কয়েক শ পরিবারের ঘরের কাঁচা মেঝে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপকূলীয় মানুষের ঈদ করোনা আর আম্পানের কারণে ফিকে হয়ে গেছে।
পিরোজপুর জেলায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে গরিব ও অসহায় মানুষদের ঈদসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
পিরোজপুর পৌরসভার রাজারহাট মহল্লার বাসিন্দা বাবলু বলেন, ‘আমার বাড়িতে তিনজন গৃহকর্মীর পরিবার ভাড়া থাকে। ছাত্রদের মেস বন্ধ থাকায় তাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আমি তাঁদের কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া নিচ্ছি না। আজ ঈদের দিন তাঁদের একটি মুরগি, পোলাওর চাল, দুধ ও সেমাই কিনে দিয়েছি।’
পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহাঙ্গীর আলম ও ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান পিরোজপুর পৌরসভায় ৭০০ অসহায় মানুষকে ঈদসামগ্রী দিয়েছেন।
কাজী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদে আমাদের বাড়িতে অনেক অতিথি আসতেন। আমরাও তাঁদের বাড়িতে যেতাম। এ বছর ঘরোয়া পরিবেশ শুধু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ পালন করছি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে কেউ কারও বাড়ি যাচ্ছে না। শুধু ফোনে বা ভার্চ্যুয়ালে আত্মীয়স্বজন বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হচ্ছে। বাঙালির ঈদ সর্বজনীন। করোনার কারণে ঈদ জৌলুশ হারালেও পারিবারিক আবহে আমরা ঈদ উপভোগ করছি। ফলে সর্বজনীন ঈদ হয়ে গেছে পরিবারকেন্দ্রিক।’