ভুয়া দন্ত চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

by
https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/d81ac2349a00b1d8d12d8f2f8433ba6a-5ecbab4c74d15.jpg
মাসুদ রানা

মানিকগঞ্জে নামের আগে ‘ডেন্টিস্ট’ লিখে প্রতারণা করা ভুয়া চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় এক দাঁতের রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাসুদ রানার নামে ওই ভুয়া চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় সাব্বির হায়দার সিজার (৪০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার (২১ মে) নিহতের স্ত্রী শাহিনুর বেগম নুরী সদর থানায় মাসুদ রানার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুজ্জামান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত সাব্বির হায়দার সিজার মানিকগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বান্দুটিয়া এলাকার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে। তিনি একটি পোশাক কারখানায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে চাকরি করতেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৭ মে সকাল ১০টার দিকে দাঁতের ব্যথা অনুভব করায় স্বামীকে নিয়ে নুরী শহরের খালপাড় এলাকায় জিন্নত রাবেয়া প্লাজায় ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল সার্জারি কেয়ার নামে মাসুদ রানার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। মাসুদ রানা দাঁত তুলে ফেলার পরামর্শ দেন। এতে তারা রাজি না হলে মাসুদ তাদের বলেন, দাঁত উঠানো না হলে ক্যানসারসহ জটিল রোগ হতে পারে। এরপর মাসুদ তাদের আতঙ্কিত করে রাজি করিয়ে পর পর দুটি ইনজেকশন পুশ করে দাঁত টেনে উঠিয়ে ফেলে। তার পর থেকেই সিজারের প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হতে থাকে। চিন্তিত হয়ে নুরী তার স্বামীর বড় ভাই সাজ্জাদ কবীরকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। পরে দীর্ঘ সময় পর জ্ঞান ফিরলে মাসুদ রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। ১৯ মে সিজারের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসলে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সিজারকে মৃত ঘোষণা করেন।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/79767495ee462f869ed52967219fbc5d-5ecbab322d519.jpg

নিহত সিজারের স্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, একটি দাঁত উঠানোর জন্য মাসুদ রানা পাঁচ হাজার টাকা নেন। মাসুদের ভুল চিকিসার কারণেই তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। মাসুদের দেওয়া কয়েকটি ইনজেকশন পুশ করা এবং ওষুধ সেবনের পর থেকেই তার স্বামী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামীর মৃত্যুর পর মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লাশ ময়নাতদন্ত না করে দাফনের জন্য বলেন। মাসুদ রানা বিডিএস ডাক্তার না হয়েও নামের আগে ‘ডেন্টিস্ট’  লিখে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। তিনি তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাসুদ রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নিয়ম মেনেই চিকিৎসা দিয়েছি।’ দেশের প্রচলিত আইনে বিডিএস পাস ব্যতীত নামের আগে ডেস্টিস্ট লেখা এবং চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ রানা যৌক্তিক কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ মা দন্ত চিকিৎসক জয়প্রকাশ সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী ন্যূনতম বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ দাঁতের রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারবে না। আর ডিপ্লোমাধারীরা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসকদের কাজে সহযোগিতা করতে পারবেন। তবে, বর্তমানে বেশকিছু ডেন্টাল ডিপ্লোমাধারী নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে সর্বপ্রকার দাঁতের চিকিৎসা দিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছেন। ’

সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান, সরকারি নিয়মনীতির মধ্যে থেকেই চিকিসকদের সেবা দিতে হবে। মাসুদ রানা নামের ওই ব্যক্তি যদি সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুজ্জামান জানান, এ ব্যাপারে নিহতের স্ত্রীর লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।