বন্ধ বিনোদনকেন্দ্র, আড্ডা জমেছে পাড়া-মহল্লায়
by চৌধুরী আকবর হোসেনঈদ ঘিরে প্রতি বছর চারদিকে থাকে নানা আয়োজন। ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে সবাই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলো সাজে নতুন সজ্জায়। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। মহামারি করোনাভাইরাস সবকিছুতে বাদ সেধেছে। রাজধানীর কোনও বিনোদনকেন্দ্র খোলেনি দর্শনার্থীদের জন্য। তবে জাতীয় সংসদ ভবন, চন্দ্রিমা উদ্যান, হাতিরঝিলের মতো উন্মুক্ত স্থানগুলোতে মানুষের আনাগোনা দেখা গেছে। পাড়া-মহল্লায় জমে উঠেছে নানা বয়সী মানুষের আড্ডা।
প্রায় দুই মাস ধরে চলমান সাধারণ ছুটিতে গৃহবন্দি মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বন্ধ রয়েছে পার্ক, সিনেমা হল, চিড়িয়াখানাসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্র। ঈদের ছুটিতেও খোলেনি এসব বিনোদন কেন্দ্র। চিরায়ত উদযাপনের যে ধারা যুগ যুগ ধরে প্রচলিত তা এ বছরে পুরোপুরি বিপরীত। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এই ঈদে উদযাপন হচ্ছে সীমিত, ঈদের জামাত হয়েছে মসজিদে। সরকারের পক্ষ থেকে জোর দিয়েই বলা হয়েছে, মহামারিকালের এই ঈদে কোলাকুলি থেকে বিরত থাকতে। বেশিরভাগ মানুষ মেনেছে এ পরামর্শ, তাই কোলাকুলির চিত্র দেখা যায়নি এবার।
বন্ধ থাকলেও অনেকে ঈদে খোলা পাবেন—এ আশায় ঢুঁ মেরে গেছেন বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। রাজধানীর শ্যামলীতে ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ডে (শিশুমেলা) অনেকেই এসেছেন শিশুদের নিয়ে। তবে বন্ধ থাকায় তাদের আবার ফিরে যেতে হয়েছে। জামাল উদ্দিন ৭ বছরের ছেলে আজাদকে নিয়ে এসেছিলেন ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ডে। তবে ভেতরে ঢুকতে না পেরে গেটের সামনে ছবি তুলে ফিরে গেছেন। জামাল উদ্দিন বলেন, ভেবেছিলাম অন্তত ঈদের দিন খোলা থাকবে। ছেলেটা তো অনেক দিনে ধরে কোথাও বেড়াতে যায় না, তাই নিয়ে আসা। কিন্তু এখন দেখি বন্ধ, তাই ফিরে যাচ্ছি।
একই চিত্র দেখা গেছে মিরপুর চিড়িয়াখানা ও জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সামনেও। খোলা পাওয়ার আশায় অনেকে গিয়েছে এসব স্থানে। তাদেরও ফেরত আসতে হয়েছে নিরাশ হয়ে। সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে বন্ধ থাকা চিড়িয়াখানা ও জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ঈদের দিনেও উন্মুক্ত ছিল না দর্শনার্থীদের জন্য। অথচ বিগত বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভিড় হতো চিড়িয়াখানায়। শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি বড়রাও আসতেন সেখানে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, জাতীয় জাদুঘর, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিলও ছিল বন্ধ।
মানুষের ভিড় দেখা গেছে হাতিরঝিল, জাতীয় সংসদ ভবন ও চন্দ্রিমা উদ্যানে। উন্মুক্ত স্থান হওয়ায় অনেকেই এখানে বেড়াতে এসেছেন। নানান বয়সী মানুষের পদভারে মুখরিত হাতিরঝিল। তবে সেখানে চক্রাকার বাস ও ওয়াটার বাস সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। এসব স্থানে অনেককেই মাস্ক ছাড়াও চলাচল করতে দেখা গেছে। রাজধানীর মিরপুর থেকে এসেছেন জসিম মিয়া। তিনি বলেন, এতদিন তো ঘরেই ছিলাম। ঈদের সময়ে কি বাচ্চাদের আর আটকে রাখা যায়? তাই একটু সময়ের জন্য এখানে নিয়ে আসলাম।
জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন আরফাত হোসেন। তিনি বলেন, বন্ধুরা মিলে এসেছি। একটা দিন বন্ধুদের সঙ্গে যদি বের হতে না পারি তাহলে আর কী ঈদ হয়। চন্দ্রিমা উদ্যানেও ঘুরতে এসেছেন অনেকেই। উদ্যানের প্রবেশমুখ, লেকের চারপাশে বসে সময় কাটাচ্ছেন তারা।
বিনোদন কেন্দ্র ছাড়াও পাড়ায় মহল্লায় জমে উঠেছে নানা বয়সী মানুষের আড্ডা। মহল্লার বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট জটলায় আড্ডায় মেতে উঠছেন তারা। মিরপুরের পীরেরবাগে ফুচকা, চটপটির দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছেন জুলকারনাইন। সঙ্গে তার ৪ জন বন্ধু। তারা বলেন, এবার আর কোথাও বেড়াতে যাইনি। তাই বন্ধুদের সঙ্গে কিছুটা সময় আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছি।
ছবি: চৌধুরী আকবর হোসেন