জয়পুরহাটে মধ্যরাতে টর্নেডোর তান্ডব

by

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ২০ গ্রামের হাজারের বেশি ঘর-বাড়ি। ভেঙ্গে গেছে শত শত গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় দশ হাজার হেক্টর বোরো ধান। বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। 

ক্ষতিগ্রস্থরা জানায়, রবিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ করে দক্ষিণ-পশ্চিম কর্ণার থেকে প্রচন্ড বেগে টর্নেডো আঘাত হানে। সেই সাথে শুরু হয় অঝোর ধারায় বৃষ্টি। প্রায় আধাঘন্টার স্থায়ী থাকে টর্নেডো। এতে বাতাসের তীব্রতায় মুহুর্তের মধ্যেই ক্ষেতলাল উপজেলার তুলশীগঙ্গা ইউনিয়নের ঘুগইল, মনঝার, দাশড়া, মালিগাড়ি, কাজিপাড়া এবং ক্ষেতলাল পৌর সদর, কোড়লগাড়ি, রামপুরা, সুর্যবান, বুড়াইল, পাটবাড়ি, মুন্দাইল ও খুঞ্জালসহ ২০ গ্রামের অন্তত হাজারেরও বেশি ঘর-বাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে। ওপড়ে গেছে কয়েক হাজার গাছ। ভেঙ্গে গেছে শতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি। এতে বিদ্যুত সরবরাহ ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রচন্ড বাতাস আর বৃষ্টিতে মাঠের বোরো ধান কাদা-পানিতে একাকার হয়ে গেছে। এতে প্রায় দশ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। খবর পেয়ে সকালে ফায়ার সার্ভিসের দল এসে রাস্তা থেকে গাছ অপসারণ শুরু করলে ক্ষেতলালের প্রধান সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুন:স্থাপিত হয়। টর্নেডো শুরুর পর থেকে জয়পুরহাট জেলা শহর সহ ক্ষেতলালে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। 

ক্ষতিগ্রস্থ দাশড়া মালিগাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জীবনে এত বড় ঝড় আমি দেখিনি। ঝড়ের শব্দে কতবার যে আল্লাহকে স্মরণ করেছি। মনে হয়েছে আর বোধ হয় আমরা বাঁচবো না। তিনি বলেন,ঝড়ের তান্ডবে গোটা গ্রামের বাড়ি-ঘর লন্ড ভন্ড হয়ে গেছে।’

ঘুগইল গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঝড়ের গতিবেগ এত বেশি যে, পাকা বাড়ির দেয়ালও ভেঙ্গে গেছে। আর গাছ পালা যে কত ওপড়ে পড়েছে তার কোন হিসেব নেই।’ 

ক্ষেতলাল পৌর সদরের আজিজুল হক বলেন, ‘ক্ষেতলাল পাটবাড়ি মহল্লায় তাঁর স্থাপিত ছ-মিলের পুরো ঘর উড়ে গেছে। ধনকুড়াইল মহল্লার ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহান তালুকদার বলেন,‘ঝড়ে তাঁর চাতাল ঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে। তাঁর তিন-চার’শ মুরগী মারা গেছে।’ 

ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমান বলেন, ‘ঝড়ের তান্ডবে উপজেলার শত শত বাড়ি ঘরের টিনের চালা উড়ে গেলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে শত শত গাছ ওপড়ে পড়েছে। প্রায় দশ হাজার হেক্টর জমির পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’ 

তাৎক্ষণিকভাবে ঝড়ে ক্ষতির পরিমাণ কত হতে পারে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘ক্ষতির ব্যাপকতা এত বেশি যে নিরুপন না করে তাৎক্ষণিকভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান জানতে মাঠে তাঁর লোকজন কাজ করছেন বলে তিনি দাবি করেন।’