হাফতারের পরাজয়ের পর এলাকা ছাড়ছে রুশ যোদ্ধারা
by বিদেশ ডেস্কলিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির দক্ষিণ-পশ্চিমে হাফতার বাহিনীর পরাজয়ের পর অঞ্চলটি ছাড়তে শুরু করেছে রুশ যোদ্ধারা। লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জিএনএ সরকারের একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সোমবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
জিএনএ সরকারের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ত্রিপোলির ওই এলাকার ফ্রন্ট লাইন থেকে হাফতার বাহিনী পিছু হটার পর রুশ যোদ্ধারাও এলাকাটি ছেড়ে গেছে।
তুরস্কের সমর্থন নিয়ে দীর্ঘ যুদ্ধের পর সম্প্রতি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ত্রিপোলির ওই বিমানঘাঁটি উদ্ধার করে লিবিয়া। এটি ছিল রাশিয়া, ফ্রান্স ও সৌদি-আমিরাতের সমর্থনপুষ্ট হাফতার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাম্প্রতি সময়ে লিবিয়া সরকারের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও সফল অভিযান। এ ঘটনাকে বৈদেশিক সমর্থনপুষ্ট হাফতার বাহিনীর জন্য বড় ধরনের পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাদের বিদেশি পৃষ্ঠপোষকদের জন্যও এটি একটি বড় আঘাত।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বহিঃশক্তির সমর্থন নিয়ে ত্রিপোলী দখলের চেষ্টা করে আসছিল হাফতার বাহিনী। তবে লিবিয়া সরকারের আমন্ত্রণে তুরস্ক এতে যুক্ত হওয়ার পরই পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে।
গত জানুয়ারিতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেন, লিবিয়ার সঙ্গে তুরস্কের ঐতিহাসিক ও সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে। আঙ্কারা হস্তক্ষেপ না করলে হাফতার পুরো দেশটি দখল করে ফেলতো।
জীবনযাপনের মানের দিকে থেকে তেলসমৃদ্ধ লিবিয়া একসময় আফ্রিকার শীর্ষে ছিল। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ওই ঐশ্বর্য নিশ্চিত করেছিল, সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ২০১১ সালে যখন পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তারপর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন সংঘাত। গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে। পশ্চিমাঞ্চলে জিএনএ-এর কর্তৃত্ব থাকলেও পূর্ব ও দক্ষিণের বেশিরভাগ অঞ্চল হাফতার বাহিনী এলএনএ-এর দখলে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে এ বাহিনী লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে লিবিয়ায় দুটি সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদের মধ্যে একটি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ। আরেকটি ফিল্ড মার্শাল হাফতারের নেতৃত্বাধীন। ত্রিপোলির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে জাতিসংঘ। তুরস্ক, ইতালি ও যুক্তরাজ্য এ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আর হাফতার বাহিনীর সমর্থনে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া, ফ্রান্স, মিসর ও সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে (জিএনএ) সমর্থন করে এবং শান্তি আলোচনার আহ্বান জানায়। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খলিফা হাফতারকে ফোন দিয়ে লিবিয়ার ব্যাপারে ‘যৌথ স্বপ্নের’ কথা বলেন।