ভারতের ১৫ বছরের জ্যোতিকে নিয়ে কেন টুইট ইভাঙ্কার
by অনলাইন ডেস্কঅসুস্থ বাবাকে সাইকেলে বসিয়ে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার রাস্তা পার হওয়ার পর থেকে আলোচিত জ্যোতি কুমারী। কঠোর পরিশ্রম ও অনমনীয় চেষ্টার কারণে ১৫ বছরের জ্যোতি শুধু ভারতে নয় আলোচিত বিশ্বদরবারেও। কিশোরীর বাবার প্রতি ভালোবাসা আর লড়াকু মানসিকতার মন জয় করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্পেরও। তিনিও টুইটে ছোট্ট কিশোরীর ভালোবাসা ও সহনশীলতার জন্য স্যালুট জানিয়েছেন।
জ্যোতি কুমারীর কাহিনি এখন সবার জানা। তাঁর সাহসিকতার গল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত।
করোনাভাইরাসের কারণে ভারতে এখন চলছে লকডাউন। বাবা অসুস্থ। কী আর করা জ্যোতি কুমারী অসুস্থ বাবাকে সাইকেলে চাপিয়ে হরিয়ানার গুরুগ্রাম থেকে বিহারে আসে, ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে। সাত দিন টানা সাইকেল চালিয়েছে সে।
জ্যোতি কুমারীর বাবা রিকশা চালাতেন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সে বাবার সঙ্গে সেখানে থাকতে শুরু করে। গুরুগ্রামের যে বাড়িতে জ্যোতি ও তাঁর বাবা ভাড়া থাকতেন, সেখান থেকে বিতাড়িত হওয়ার ভয়ে জ্যোতি আহত বাবাকে সাইকেলের পেছনে বসিয়ে বাড়ির (হরিয়ানা থেকে বিহার) পথে রওনা হয়।
কিশোরীর বাবা বলেন, ‘লকডাউন পরিস্থিতি মধ্যেই জ্যোতি বাড়ি ফেরার কথা বলে। আমি মেয়েকে বলি, আমরা এখন কোনো বাস বা ট্রেনে করে ফিরতে পারব না। আর আমার হাঁটার মতো শক্তি নেই। জ্যোতি বলে আমাদের একটা সাইকেল কিনতে হবে।’
এরপর তো পুরোটাই গল্প। এ গল্প জানার পরই ইভাঙ্কা ট্রাম্প জ্যোতি কুমারীর কীর্তির কথা শুনে টুইট করেন। তিনি টুইটে লেখেন, ১৫ বছরের কিশোরী জ্যোতি কুমারী তার আহত বাবাকে সাইকেলের পেছনে বসিয়ে সাত দিনে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। ভারতীয়দের ধৈর্য ও ভালোবাসা সত্যিই কল্পনাতীত।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভারতের সাইক্লিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ওঙ্কার সিং জানিয়েছিলেন, ‘অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া জ্যোতি কুমারী যদি ট্রায়ালে পাস করে তবে তাকে দিল্লির জাতীয় সাইকেল শিবিরে রাখা হবে। আমরা সকালেই ওই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাকে জানানো হয়েছে যে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর আগামী মাসেই তাকে দিল্লি নিয়ে আসা হবে। আমরা তার যাতায়াত, থাকা–খাওয়ার সব ব্যবস্থা করব।’
জ্যোতিকে এই প্রস্তাব দেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে ওঙ্কার সিং বলেন, ‘কিছু একটা আছে তার মধ্যে। আমার মনে হয় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার সাইকেল চালানো সহজ কাজ নয়। তার জন্য ওই কিশোরীর শারীরিক ধৈর্য ও শক্তির প্রয়োজন। আমরা সেটাই পরীক্ষা করব। আগামী মাসেই দিল্লিতে ট্রায়াল হবে জ্যোতির।’
জ্যোতি কুমারী তাঁর বাবাকে সাইকেলের পেছনে বিহার পৌঁছানোর কাহিনি শুনে দেশটির অনেক রাজনীতিবিদই অবাক হয়েছেন। জ্যোতিকে নিয়ে টুইট করেন ওমর আবদুল্লাহ, কার্থি চিদাম্বরমসহ অনেকে।
এদিকে বিস্ময়কন্যা জ্যোতির পড়াশোনায় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তার রাজ্যর এক রাজনীতিবিদ। বিহারের লোক জনশক্তি পার্টির প্রেসিডেন্ট চিরাগ পাসওয়ান জ্যোতির পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার পড়াশোনার ভার নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন এই রাজনীতিবিদ। তিনি জানান, তাঁর শিক্ষার জন্য সব সাহায্য করা হবে। জীবনকে সঠিক পথে পরিচালনা করাতে জ্যোতি যা সিদ্ধান্ত নেবে তাঁকে সেভাবেই সাহায্য করা হবে।
সাহায্যের এই আশ্বাস পেয়ে আপ্লুত ১৫ বছরের বিস্ময়কন্যা। ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার প্যাডেল করে বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পর তার এই প্রচেষ্টা বিশ্বদরবারে সম্মান পাওয়ায় মেয়েকে নিয়ে গর্বিত হন তার বাবা-মাও।
বিস্ময়কন্যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ দেশটির কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ। তার প্রশংসা করেছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তথ্যসূত্র: এনডিটিভি ও টুইটার