স্বাস্থ্যবিধি মেনে জামাত, করোনা থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ মোনাজাত

by
https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/883dca371c05f7aff12f345454db3589-5ecb3f34f32a7.jpeg
মসজিদে ঈদ জামাত

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আজ সোমবার (২৫ মে) সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে। অন্যান্য বছর ঈদের জামাত ঈদগাহে হলেও এবার মসজিদে নামাজের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব রেখে নামাজ আদায়, নামাজ শেষে কোলাকুলি এবং হাত না মেলাতে বলা হয়েছে। নামাজ শেষে করোনা থেকে মুক্তি পেতে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হলো।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

আনন্দঘন পরিবেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে। ঈদগাহে আর আগে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হলেও এবার করোনার কারণে মসজিদে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। 

সকাল ৭টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। একই মসজিদে সকাল পৌনে ৮টায় দ্বিতীয় ও সকাল সাড়ে ৮টায় তৃতীয় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামাতের ইমাম নোমান আল হাবিব।

এদিকে শহরের জামিয়া ইউনুছিয়া মসজিদ, ভাদুঘর শাহি জামে মসজিদ, কুমারশীল মোড় মদিনা সজজিদ, শেরপুর জামে মসজিদ, পুলিশ লাইস জামে মসজিদ, মেড্ডা বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে কয়েক ধাপে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজ আদায়কালে মুসলিম উম্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি বৈশ্বিক করোনা মহামারি থেকে মুক্তি লাভের জন্যে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। 

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/5927a694d6f533ec119fe0c38de1c105-5ecb3f34db005.jpeg
স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ জামাত

ঈদের নামাজ আদায় শেষে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করাহয়। এছাড়া বৈশ্বিক করোনা থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে মোনাজাত করা হয়। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্যও দোয়া কামনা করেন। পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বস্তরের মানুষকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, ‘করোনার কারণে এবছর একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপট হাজির হয়েছে। আমরা সবাই নিরাপদ দূরুত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। এবারের ঈদে আমরা মানুষকে ঘরে থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। ঘরে থাকলেই মানুষ সুস্থ থাকতে পারবো। আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের খোঁজখবর রেখে একত্রে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবো। আমরা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন করবো।’ পরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বশ্রেণি পেশার মানুষকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/36a5f9dc3a531a7ff7f5d561fe01cd79-5ecb3f34f0ef7.jpeg
ঈদ জামাত

ঈদের নামাজ আদায় শেষে কোলাকুলি ও হ্যান্ডশেক করলেও এবার কিন্তু সেটা লক্ষ্য করা যায়নি। ঈদের নামাজ আদায় কালে পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা মসজিদের বাইরে নিরাপত্তা মূলক দায়িত্ব পালন করেন। 

 নাটোর

স্বাস্থ্যবিধি ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে নাটোরে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন মসজিদে এসব জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/808bc59df2c482fa67cb0a9dfbd47ecd-5ecb3fb51d124.jpg
ঈদ জামাত

জেলার ৩০৩২টি মসজিদে এই নামাজ পড়ান স্থানীয় ঈমাম ও খতিবরা।

নাটোর ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম জানান, জেলার সব মসজিদেই সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানা হয়েছে। তবে মসজিদে নামাজ হওয়ার কারণে অনেক স্থানেই দুই-তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামায শেষে কোথাও কোলাকুলি বা নির্দেশনা অমান্য করতে দেখা যায়নি।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/666c7dd768b4bec5394e2b97ff6e0941-5ecb3fb5046e7.jpg
ঈদ জামাত

জেলার সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ফজলুল উলুম কওমি মাদ্রাসায় সকাল সাড়ে ৬টায় এবং প্রধান জামাত শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদে পৌনে ৮টায় পড়ানো হয়।

তবে নামাজ পড়ার জন্য বেশিরভাগ মুসল্লি জায়নামাজ নিয়ে আসলেও সবার মুখে মাস্ক ছিল না।

গোপালগঞ্জ

দেশ ও জাতির মঙ্গল এবং করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির কামনা করে গোপালগঞ্জের মসজিদে মসজিদে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/f6ba6c7a44003f9267b1301613cfd55f-5ecb433edcb62.jpg
ঈদ জামাত

সমাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে সকাল ৮টায় জেলার সব মসজিদে একযোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জেলার প্রধান ঈদের জামাতে( কোর্ট মসজিদে) ইমামতি করেন মাওলানা হাফিজুর রহমান।

এছাড়া সকাল সাড়ে ৮ দ্বিতীয় ও ৯টায় তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চিরচেনা রীতি ভেঙে এবার শিশু ও বয়স্করা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকে।

ময়মনসিংহ

যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্য্যের মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহে ঈদুল ফিতরের ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশনায় কোনও ঈদগাহে ঈদের জামাত হয়নি। মসজিদে ঈদের জামাত হয়েছে। ঈদ জামাতে আসা মুসল্লিরা জায়নামাজ নিয়ে মসজিদে আসেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজে দাঁড়ালেও সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে অধিকাংশ মুসল্লিকে মাস্ক ছাড়াই নামাজে আসতে দেখা গেছে। তবে ঈদের জামাত শেষে কেউ কোলাকুলি কিংবা হাত মেলায়নি।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/9ed95c49b3f95d64a2087c085bc7f557-5ecb433c529ba.jpg
ঈদের জামাতে আসছেন মুসল্লিরা

মহাগরীর চরপাড়া হযরত বেলাল (রা.) জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মুফতি মো. আনোয়ার হোসাইন জানান, ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর পরই মসজিদের মাইকে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনে ঈদের জামাতে অংশ নেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নামাজের আগে আলোচনায় করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের দিক নির্দেশনা মানার জন্য বলা হয়েছে। তবে এবার কোনও মুসুল্লি কোলাকুলি করেনি জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান জানান, স্বাস্থ্যবিধি  ও সরকারের নির্দেশনা মেনে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদেও খতিব এবং মুসল্লিদের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সহায়তা করেছে। 

যশোর

সারাদেশের মতো এবার যশোরেও ভিন্নভাবে উদযাপন হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে মসজিদে ঈদের জামাত হয়েছে। অন্য বছরের মতো ঈদের জামাতে বৃদ্ধ ও শিশুদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। ছিল না নামাজ শেষে কোলাকুলির দৃশ্য।
নামাজ আদায়ের আগে মুসল্লিরা নিজেদের জায়নামাজ সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। পাশাপাশি জীবাণুমুক্ত হয়ে মসজিদে প্রবেশ করেন। এরপর শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সারিবদ্ধ হয়ে বসেন। নামাজ শেষে করোনা থেকে আল্লাহর কাছে মুক্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা দ্রুত মসজিদ ত্যাগ করেন। প্রথম জামাতের পর মসজিদে দ্বিতীয় জামাতের জন্য জীবানুনাশক ছিটিয়ে মসজিদ জীবাণুমুক্ত করা হয়।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/cbad7468c69f440cfa61550aee34a49a-5ecb45d2880fc.png
ঈদের জামাত

যশোর কালেক্টরেট মসজিদে নামাজ আদায় করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নামাজ শেষে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদে মসজিদে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করেছি। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় করেছেন।
আমরা বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এই সময় ধৈর্য ধারণের বিকল্প নেই। আস্তে আস্তে হয়তো শিথিলতা আসবে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমাদের জীবনযাপন করতে হবে।’

নীলফামারী

নীলফামারীর ৬ উপজেলার ৬৪ ইউনিয়নে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। সোমবার সকালে তিন ধাপে জেলার বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। 
করোনা পরিস্থিতির কারণে ঈদের নামাজ পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে মসজিদে আদায় করা হয়। 

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/a51635216cd76ddaaeb2776cd3d52d6f-5ecb472202947.JPG
ঈদ জামাত

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের (ইসলামিক ফাউন্ডেশনের) নির্দেশনা মেনে ঈদের নামাজে কোলাকুলি, হ্যান্ডশেক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করা হয়। জেলা শহরের বিভিন্ন মসজিদ ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। 
জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর ও সদরসহ ৩৩৩৭ মসজিদে তিন ধাপে নামাজ আদায়ের নির্দেশনা জারি করেন জেলা প্রশাসন। প্রথম জামাত সকাল ৮.০০, দ্ধিতীয় জামাত ৮.৪৫ ও তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯.৩০ মিনিটে। আইন শৃঙ্গলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মসজিদের প্রধান ফটকে মুসল্লিদের জীবাণুমুক্ত করতে আইনশৃঙ্গলা বাহিনীর সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/6fbab1305a2fc9179db7523051428eb5-5ecb4721b5aa3.jpg
ঈদ জামাত

জেলা শহরের বড় বাজার মসজিদের ঈমাম মাওলানা মুক্তি হাবিবুল্যা জানান, করোনা সংক্রমণ এড়াতে মুসল্লিদের সুরক্ষা নিশ্চত করতে শিশু, বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি এবং তাদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা ঈদের নামাজের জামাতে অংশ নিতে পারবে না। এমনকি জামাত শেষে কোলাকুলি ও হাত মেলাতে পারবেন না। এই বিষয় গুলো আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। 

পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান জানান, শহরের শান্তি শৃঙ্গলা রক্ষার্থে আনসার, পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহীনির সদস্যরা কাজছেন।

জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ১৫ নির্দেশনা মেনে মাঠে ময়দানে ঈদের জামাত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্থানীয় মসজিদে তিন ধাপে নামাজ আদায়ের সিন্ধান্ত হয়।