নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের, স্নায়ু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি চীনের

by

হংকংয়ের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় নিরাপত্তা আইন ঘিরে চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রবিবার হোয়াইট হাউসের তরফে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত ওই আইন কার্যকর হলে অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে হংকংয়ের মর্যাদা হুমকির মুখে পড়বে। এদিকে যু্ক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন স্নায়ু যুদ্ধ শুরুর হুঁশিয়ারি দিয়ে বেইজিং বলেছে,  ‘রাজনৈতিক ভাইরাস’ ছড়িয়ে নাগরিকদের চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য করছে ওয়াশিংটন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/26f9b6892d573d7860fd31d50c30309b-5ecb3619bfa24.JPG
প্রস্তাবিত আইন ঘিরে হংকংয়ে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা ও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কথার লড়াই জোরালো হয়েছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালুর উদ্যোগ নেয় চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। এই আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর অধীনে হংকংয়ের আইন প্রণেতাদের বাদ দিয়েই দেশদ্রোহিতা, বিচ্ছিন্নতা এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে অভিযুক্তদের সাজা দেওয়ার সুযোগ পাবে চীনা কর্তৃপক্ষ। এতে স্বায়ত্তশাসন খর্বের আশঙ্কায় বিক্ষোভ শুরু করেছে হংকংয়ের বাসিন্দারা। প্রস্তাবিত এই আইনের নিন্দায় সরব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার এই আইনকে হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের ‘মৃত্যু ঘণ্টা’ বলে অভিহিত করেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও।

রবিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হংকংয়ের জন্য প্রস্তাবিত আইন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রায়েন। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এই জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে তারা মূলত হংকংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় আর তা যদি করা হয় তাহলে হংকং উচ্চ মাত্রার স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে বলে মেনে নিতে ব্যর্থ হবেন (পররাষ্ট্র) মন্ত্রী মাইক পম্পেও।’ ‘আর তা হলে হংকং ও চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে’, বলেন মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

উল্লেখ্য, ১৫০ বছর ঔপনিবেশিক শাসনে থাকার পর লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষে ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই হংকং চীনের কাছে ফেরত দেয় যুক্তরাজ্য। তখন থেকে বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হংকংকে ২০৪৭ সাল অবধি স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দিয়েছে চীন। এই সময়ে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতি বাদে অন্য সব বিষয়ে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতে পারবে অঞ্চলটি। তবে গত বছর অঞ্চলটিতে ব্যাপক বিক্ষোভের পর নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে চীন।

প্রস্তাবিত আইন ঘিরে সমালোচনার মুখে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, হংকং সংশ্লিষ্ট ঘটনা চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় আর এতে কোনও বিদেশি হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না। তিনি অভিযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনৈতিক শক্তি চীন-মার্কিন সম্পর্ককে জিম্মি করে দেশ দুটিকে নতুন স্নায়ু যুদ্ধের কিনারায় ঠেলে দিচ্ছে।

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি বলেন, দুঃখজনকভাবে করোনাভাইরাসের তাণ্ডবের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে একটি রাজনৈতিক ভাইরাসও ছড়িয়ে পড়েছে। ‘এই রাজনৈতিক ভাইরাস চীনের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও নিন্দার সব সুযোগই ব্যবহার করছে।’ চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এখানে বলতে চাই: মূল্যবান সময় আর নষ্ট করবেন না, মানুষের জীবনকে আর অবহেলা করবেন না।’