জন্মদিনে বিদ্রোহী কবিকে প্রাপ্য সম্মান দিলেন বঙ্গবন্ধু

by
https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/f27e63e7934f6adc55c7d31463b738f4-5ecac841d1ae2.jpg
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকায় এনে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁর জন্মদিন পালন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। (দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত ছবি)

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২৫ মে’ঘটনা।)

স্বাধীন বাংলার পবিত্র মাটিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের চারণকবি মহা বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম দিবস পালিত হচ্ছে এটা অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের বিষয়। বাংলার শেষ রাতের অন্ধকারে নিশিথ নিশ্চিত বিপ্লবের রক্তলীলার মধ্যে বাংলা তরুণরা শুনেছে রুদ্র বিধাতার অট্টহাসি, শুনেছে কালভৈরবের ভয়াল গর্জন, নজরুলের জীবন কাব্য সঙ্গীত নজরুলের কণ্ঠে। জন্মতিথিকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বাণীতে তিনি এ কথা লেখেন। ১৯৭২ সালের ২৫ মে, ১১ জ্যেষ্ঠ, কবির ৭৪তম জন্মদিন। কবিকে পশ্চিম বাংলা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে আনা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার সব প্রস্তুতি রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়েছিলেন।

১৯৭২ সালের ২৬ মে দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত প্রধান খবরে বলা হয়, আজ প্রতীক্ষিত ১১ জ্যৈষ্ঠ। বিদ্রোহী কবি সর্বহারার কবি নজরুলের ৭৪ তম জন্মদিন। ৩০ লাখ মানুষের রক্তে ভেজা স্বাধীন বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে এই দিন, প্রথমবারের মতো কবির উপস্থিতিতে।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/05/3e8802fa7ea84ecc746596b0dd2ecf92-5eb10b154e900.jpg
ফিরে দেখা ১৯৭২

প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই দেশের মাটিতে কবির জন্মদিন পালন এই প্রথম নয়। এর আগে রাজনৈতিক অপব্যাখ্যার ধূম্রজালে কবির জন্মদিন পালন করা হতো। গভীর মুক্ত সৃষ্টির একটা বিরাট অংশ অনুপস্থিত রেখে অপব্যাখ্যা করা হতো তার। কিন্তু সেবারই প্রথম মুক্ত মাটিতে আরাধনা হয় কবির মুক্ত সৃষ্টির, আত্মার বাধাহীন ঐকান্তিকতায় সবাই বরণ করে নেন কবিকে।

আর তাকে ফিরিয়ে আনা থেকে তার জীবন যাপন সহজ করে তোলার সকল চেষ্টা অব্যাহত রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ সরকার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৪ তারিখ বিকেলে কবি নজরুলকে তার ধানমন্ডির বাসভবনে দেখে আসার পর সরকারি সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/50558660e02ceb13a163a56ab1d2a901-5ecac840e5c77.jpg
স্বাধীন বাংলায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন উদযাপন। (দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত ছবি)

এদিকে রাষ্ট্রপ্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বিদ্রোহী কবি নজরুলের সমগ্র রচনাবলী প্রকাশ ও দেশের আগামী নাগরিকের জন্য তা সংরক্ষণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কবি নজরুল বাঙালি জাতিকে সত্য ন্যায় মানবতা প্রতিষ্ঠার পথ দেখিয়েছেন। নজরুল গীতি স্বরলিপি ও অন্যান্য রচনাসমগ্র দায়িত্ব দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজকে গ্রহণ করতে হবে। তথ্য ও বেতার দফতর আয়োজিত কবির জীবন ও সাধনার ওপর একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে রাষ্ট্রপ্রধান এ কথা বলেন।

বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা ছাত্রনেতা শিল্পী সাহিত্যিক সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ সেদিন এসেছিলেন কবির ধানমন্ডির বাসায়, বাসার সামনে। এসেছিলেন বিনীত হৃদয়ে অর্ঘ্য নিবেদন করতে। সেইদিন সারাদিনই বৃষ্টি থাকলেও সেদিকে কোনও তোয়াক্কা করেনি অনুরাগীরা। শহরের সকল নাগরিকের কাছে ধানমন্ডির বাসভবন প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়। গানের কবি প্রাণের কবিকে অনেক গান শোনানো হয় সেদিন। কবি তার স্মৃতি অনেকটাই হারিয়েছেন তখন। প্রতিবেদন বলছে, এখন একমাত্র গানেই সাড়া দেন তিনি। বিকেলবেলায় কবি গান শুনে কেঁদেছেন, কখনও কখনও হেসেছেন।

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/05/25/8eab4df709b82b6a6c6d5bd629bbc749-5ecac841266c1.jpg
বিদ্রোহী কবিকে তার জন্মদিনে তার লেখা গান গেয়ে শোনাচ্ছেন ফিরোজা বেগম ও ফেরদৌসী রহমান।

বিজ্ঞানকে কল্যাণ শান্তির কাজে লাগাতে হবে : বঙ্গবন্ধু

দেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন বিজ্ঞানকে অবশ্যই সাধারণ মানুষের কল্যাণ ও শান্তির কাজে ব্যবহার করতে হবে, ধ্বংসের কাজে নয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বিজ্ঞানীদের এক সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ধ্বংসের কাজে ব্যবহারের ব্যাপারে বৃহৎ শক্তিবর্গের প্রতিযোগিতা ধ্বংস ডেকে আনবে এবং পৃথিবী থেকে সভ্যতার নাম নিশানা মুছে যাবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ঘিরে আয়োজিত এই সম্মেলনে যোগদানকারী বিজ্ঞানীদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞানীদের গণমুখী কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনারা এমন কিছু সৃষ্টি করুন যা জনগণ ও দেশের কল্যাণে লাগে। বঙ্গবন্ধু বলেন, বিজ্ঞানের উন্নয়নকে বিশ্বের সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করা উচিত। এই প্রসঙ্গে তিনি গ্রামোন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা ভোগের অধিকার শুধুমাত্র শহরবাসীর একার নয়। গ্রামের মানুষের স্বাধীনতা ভোগের অধিকার রয়েছে। তাদের সার্বিক কল্যাণের প্রতি আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।