প্রিয়জন রেখে করোনা রোগীদের সঙ্গেই ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করবেন তাঁরা

by

তাঁরা কেউই করোনা রোগী নন। করোনা উপসর্গও নেই তাদের কারও। তারপরও ঈদ-উল-ফিতরের মতো আনন্দের দিনটিও কাটবে স্বামী-স্ত্রী, সন্তান সন্ততি ও বাবা-মাসহ পরিবার পরিজনহীন। পরিবার পরিজনকে পেছনে ফেলে পবিত্র ইদ-উল-ফিতরের আনন্দ তাঁরা ভাগাভাগি করবেন করোনা রোগীদের সাথে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডেই কাটবে তাঁদের দিন। কারণ তারা যে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের নার্স জাকিয়া পারভিন সীমা বলেন, ‘বাসায় মায়ের কাছে ছোট বাচ্চাকে রেখে তারপর ডিউটি করে যাচ্ছি। সেবাদানের উদ্দেশ্যেই যখন এ পেশায় নাম লিখিয়েছি তখন পিছ পা হওয়ার সুযোগ নেই।’

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট সুভাষ দত্ত বলেন, ‘দেশের জন্য, দেশের মানুষের সেবা করার জন্যই তো এই পেশায় এসেছি। এখনই তো সেই উত্তম সময়।’ 

বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৮ জন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০ জন। এছাড়াও সর্বশেষ ২৪ মে রবিবার রাত পর্যন্ত নতুন করে আরো পাঁচজন করোনা পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের তিন জনের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলায় বাকি দুই জনের বাড়ি আমতলী ও বেতাগী উপজেলায়। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী করোনা সংক্রমিত রোগীদের সংস্পর্শে থেকে সাত দিন চিকিৎসাসেবা প্রদান করার পর চিকিৎসক ও নার্সদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। এ মুহূর্তে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত ও সন্ধিগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা সেবায় তিনজন চিকিৎসকসহ ছয়জন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও সাতদিন দায়িত্ব পালন শেষে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ছয়জন চিকিৎসকসহ আরো ১২ জন নার্স।

করোনা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একমাত্র চিকিৎসক হওয়ায় বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের পুরো দায়িত্ব এখন ডা. মো. কামরুল আজাদের ওপরেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী কোনো চিকিৎসক প্রতি সাতদিন চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পর ১৪দিন কোয়রেন্টিনে থাকার কথা। কিন্তু একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক হওয়ায় কোয়ারেন্টিনে যাওয়া হচ্ছে না চিকিৎসক কামরুল আজাদের।

ডা. কামরুল আজাদের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু চাকরির সুবাদে দায়িত্ব পালন করছি না। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেও আমরা এখানে নিয়োজিত রয়েছি’। তিনি বলেন, ঈদের দিন আমাদের স্বজন এবং বন্ধুরা যখন তাদের আনন্দঘন মুহূর্তের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করবেন, সে সব ছবি দেখে আমার একমাত্র সন্তানের কথা ভেবে হলেও মনটা খারাপ হবে। তারপরও এসব মেনে নিয়েই আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত ও সন্ধিগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতেই হবে। 

বরগুনা জেলা সিভিল সারজন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২৪ মে রবিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে স্বজনদের মাঝে ফিরে গেছেন ৩১ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন দুজন। এছাড়া চিকিৎসাধীন আরও ১৬ জন সুস্থ হওয়ার পথে।