আইওয়ার পর নিউ হ্যাম্পশায়ারে স্যান্ডার্সের চমক

by

লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হলেও শেষ পর্যন্ত নিউ হ্যাম্পশায়ারেও জয় পেলেন বার্নি স্যান্ডার্স। আইওয়া প্রাইমারির পর ১১ ফেব্রুয়ারি হওয়া নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারি বা প্রাথমিক বাছাইয়েও জয় পেয়েছেন ভারমন্টের এ সিনেটর। ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারিতে এখন পর্যন্ত বার্নি স্যান্ডার্স ও পিট বুটিগিগের মধ্যেই জোর লড়াই হচ্ছে। নিউ হ্যাম্পশায়ারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

ভারমন্টের পাশের অঙ্গরাজ্য হওয়ায় নিউ হ্যাম্পশায়ারে এমনিতেই এগিয়ে থাকেন স্যান্ডার্স। ২০১৬ সালে এই অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারিতে হিলারি ক্লিনটনকে তিনি ২০ শতাংশ পয়েন্টের বেশি ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। ফলে এবার আরও বড় ব্যবধানে জয় পাবেন বলেই মনে করা হচ্ছিল। বাস্তবে কিন্তু তেমনটা হয়নি। ইন্ডিয়ানার সাউথ বেন্ড শহরের সাবেক মেয়র বুটিগিগের সঙ্গে রীতিমতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেই তাঁকে জয় পেতে হয়েছে।
গত অক্টোবরে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকেই প্রাইমারিতে স্যান্ডার্সকে দুর্বল প্রার্থী হিসেবে ঠাওরেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে দুটি ফল এসেছে তাতে ভিন্ন অবস্থাই দেখা যাচ্ছে। নিউ হ্যাম্পশায়ারের প্রাইমারির পর নেভাদা, সাউথ ক্যারোলাইনা, টেক্সাসের মতো অঙ্গরাজ্যে ভোট হবে। ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে কাগজে-কলমে অনেকেই এগিয়ে রয়েছেন। স্যান্ডার্স সেখানে দু দুটি জয় নিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বলা যায়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউ হ্যাম্পশায়ারে স্যান্ডার্স বুটিগিগ বা তৃতীয় হওয়া মিনেসোটা সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচারের কাছ থেকে যে প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন, তার মূলে রয়েছেন নির্দলীয় ভোটারেরা। এই ভোটারেরা দুই দলের প্রাইমারিতেই ভোট দেওয়ার অধিকার রাখেন। এই নির্দলীয় ভোটই বুটিগিগ ও ক্লোবুচারকে অনেকটা এগিয়ে দেন। তবে স্যান্ডার্সের মাঠে অবস্থান করার কৌশল বেশ কাজে দিয়েছে। না হলে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার ঐতিহ্যধারী অঙ্গরাজ্যে ভিন্ন ফলও হয়তো তাঁকে দেখতে হতো। বাকি যে দুই উল্লেখযোগ্য প্রার্থী এলিজাবেথ ওয়ারেন ও জো বাইডেন, তাঁদের দুজনই নির্বাচনের রাতেই সাউথ ক্যারোলাইনার উদ্দেশে নিউ হ্যাম্পশায়ার ছাড়েন।
এবারও স্যান্ডার্সের বিজয়রথের মূল জ্বালানিটি আসছে তরুণ ও শ্রমিক শ্রেণির ভোটারদের কাছ থেকে। গত চার বছর তিনি নিজের সমর্থন বাড়াতে বিস্তর কাজ করেছেন। এ ছাড়া অশ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যেও স্যান্ডার্সের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে বেড়েছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে তহবিল সংগ্রহের কৌশলই স্যান্ডার্সকে এসব ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখছে। নানা বিবাদে বিভক্ত ডেমোক্রেটিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে পরাজিত করতে স্যান্ডার্সের এ কৌশল শেষ পর্যন্ত কতটা কাজে লাগে, তা দেখতে অবশ্য অনেক অপেক্ষা করতে হবে।
১১ ফেব্রুয়ারি নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রাইমারি বিজয়কে স্যান্ডার্স ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প জমানার শেষের শুরু’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ডেমোক্রেটিক দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি। আবার বুটিগিগের মতো প্রার্থী, যারা শতকোটিপতিদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করছেন তাদের এক হাত নিতেও ভোলেননি। বলেছেন, এই নির্বাচনী লড়াই মূলত ধনীদের অর্থায়নের প্রার্থী বনাম ধনীদের বিরুদ্ধের প্রার্থীর মধ্যে।
এক প্রতিক্রিয়ায় স্যান্ডার্স বলেন, ‘যে কারণে আমি মনে করি যে, আমরা জিততে যাচ্ছি, তা হলো তৃণমূল পর্যন্ত উপকূল থেকে উপকূলে লাখো মানুষকে নিয়ে আমাদের এই আন্দোলন। আমাদের এই আন্দোলন বহু প্রজন্মের, বহু বর্ণ ও জাতির মানুষকে নিয়ে, যা এক নজিরবিহীন রাজনৈতিক আন্দোলন। আমরা এমন এক অর্থনীতির জন্য লড়ছি, যা আমাদের সবার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়।’
এদিকে বুটিগিগও পিছিয়ে নেই। আইওয়াতে আক্ষরিক অর্থেই স্যান্ডার্সের সঙ্গে টাই করার পর নিউ হ্যাম্পশায়ারেও দারুণ লড়েছেন। নিজের সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গা হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেছেন, ডেমোক্রেটিক দলের রক্ষণশীল অংশের সমর্থন ও নির্দলীয় ভোটারদের। সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে বুটিগিগ বলেন, স্কুলজীবন থেকেই তিনি স্যান্ডার্সের একজন ভক্ত। তবে এ কথাও সত্য যে, তাঁর রাজনৈতিক পথ বিভাজন সৃষ্টি করছে।