দিনটি শুধুই ভালোবাসার
by মনিজা রহমান‘বন্ধুত্ব হলো মালভূমির মতো, যেখানে এক সঙ্গে অনেকে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু ভালোবাসা বা প্রেম হলো পাহাড় চূড়া, যেখানে থাকতে পারে একজনই’—তারুণ্যের উন্মেষকালে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্রে আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের মুখে কথাটা শুনেছিলাম। তারপর জীবনের নানা সময়ে এটি নিয়ে ভেবেছি। আসলেই তো! বন্ধুত্ব হতে পারে অনেকের সঙ্গে। কিন্তু একই সময়ে মানুষ একজনকেই ভালোবাসতে পারে। ভালোবাসা বা প্রেম পৃথিবীর সবচেয়ে চিরন্তন, শাশ্বত অনুভূতি। যে কারণেই দুনিয়ার সৃষ্টি। পরম প্রভু আদম আর হাওয়াকে বানিয়ে তাদের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি করেছিলেন, যেখান থেকে মানবজাতির সূচনা। ভালোবাসার সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রে রক্তের বন্ধনের চেয়েও ওপরে।
‘ভালোবাসা সে তো পিটুইটারির খেলা, আমরা বোকারা বলি প্রেম’—নচিকেতার এই গানের লাইনটি সংগীতপ্রেমী অনেকের জানা। বিজ্ঞানীরা সবকিছুর মধ্যে কারণ খুঁজতে ভালোবাসেন। নর–নারীর পারস্পরিক ভালোবাসা ও আকর্ষণের কারণ অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানীরা পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসরণের ব্যাখ্যা পেয়েছেন। কিন্তু, এই কারণ জানার পরেও কোন মানুষ কি নিজেকে ভালোবাসার আবেশ থেকে প্রত্যাহার করতে পেরেছেন? পারেননি। কারণ ভালোবাসা স্বপ্নের মতো, যে ভালোবাসে সে তখন সেই স্বপ্নের ঘোরে থাকে। যার জীবনে সেই তীব্র ভালোবাসা থাকে না, সে কবিতা, গানে, নাটকে, সিনেমায়, গল্পে-উপন্যাসে ভালোবাসার কথা খুঁজে
বেড়ায়। পৃথিবীতে যত মহান সৃষ্টি, তার মূলে তো সেই ভালোবাসাই।
‘সবার জীবনে প্রেম আসে, তাই তো সবাই ভালোবাসে’—কেউ কি
বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, তার জীবনে কোনো দিন প্রেম আসেনি? কেউ বলতে পারবে না। পৃথিবীর সবচেয়ে নীরস মানুষটিও জীবনে এক মুহূর্তের জন্য হলেও কাউকে না কাউকে ভালোবেসেছিল। কারও ভালোবাসা হয়তো সাময়িক, কারও সারা জীবনের।
বিখ্যাত লেখক হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন সারা জীবন অবিবাহিত ছিলেন। তিনি কোনো দিন বিয়ে করেননি। মৃত্যুর পরে তাঁর পকেটে পাওয়া গিয়েছিল বহু বছর আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া তাঁর মৃত প্রেমিকার চিঠি। প্রেমিকার মৃত্যুর পরেও অ্যান্ডারসন তাঁকে ভুলতে পারেননি। এমন ভালোবাসা সবাই বাসতে পারে না।
‘ভালোবাসলেই সবার সঙ্গে ঘর বাঁধা যায় না’—অ্যান্ডারসন যেমন পারেননি, তেমনি অনেক মানুষই তাঁর কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে জীবনসঙ্গী করতে পারে না। তাদের কোনো দিন গাওয়া হয় না— ‘তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর হাসি আর গানে ভরে তুলব, যত ব্যথা দুজনেই সইব’। অনেকেই হন ব্যর্থ প্রেমিক বা প্রেমিকা। কিন্তু মিলনেই কি শুধু ভালোবাসার সার্থকতা? তাতো নয়, বিরহেই হয়তো ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। পৃথিবীর তাবৎ শিল্পকলা-সাহিত্যে তো বিরহেরই জয়গান! লাইলি যেমন মজনুকে পাইনি, শিরি পায়নি ফরহাদকে। তাদের মতো করে অগুনতি মানুষ কেউ কারও প্রিয়তমকে পায়নি।
‘ভালোবাসা যত বড়, জীবন তত বড় নয়/তোমায় নিয়ে হাজার বছর থাকতে বড় ইচ্ছে হয়’— জীবন তো শুধু কাজের নয়। নয় কেবল পাঁচটি মৌলিক চাহিদার। সেখানে ভালোবাসার দরকার আছে। শরীরকে টিকিয়ে রাখে খাবার, আর ভালোবাসা হলো মনের খাদ্য। তার কমতি হলে মানুষ বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা, একাকিত্ব, মানসিক ভারসাম্যহীনতাসহ বহু সমস্যায় ভোগে। মনই তো নিয়ন্ত্রণ করে সবকিছু।
‘এ জীবন কেবলই ভালোবাসার’—এই শিরোনামে ভালোবাসার দিন অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা আয়োজন করছে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের। যেখানে ভালোবাসার জুটিদের জন্য থাকবে প্রথম আলো-এসেনশিয়াল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস ‘ভালোবাসা পুরস্কার’। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা পরিবার থেকে সবার প্রতি ভালোবাসার আহ্বান—অনুষ্ঠানে যোগ দিন, জিতে নিন ভালোবাসার পুরস্কার। জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানে কোনো বক্তৃতা-গুরু গম্ভীর আলোচনা থাকবে না। থাকবে ভালোবাসার আলাপ–সংলাপ, ভালোবাসার গান, ভালোবাসার কবিতা, ভালোবাসার নাচ, ভালোবাসার কৌতুক, ভালোবাসার আপ্যায়ন, ভালোবাসার আড্ডা আর অবশ্যই ভালোবাসার সেলফি।
‘এখন তো সময় ভালোবাসার, দুটি হৃদয় কাছে আসার’—১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যাটা হবে শুধুই ভালোবাসার, পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে ভালোবাসার কথা বলার, হাতে হাত রেখে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম অনুভূতিকে ফিরিয়ে আনার।