https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/02/14/be7d299ba709586fbd58c2d6550512eb-5e468e0ae132d.jpg
নাবিলা ইসলাম

আটলান্টার ‘ওকাসিও’

by

আমেরিকার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত জর্জিয়ায় সবাইকে চমকে দিতে পারেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাবিলা ইসলাম। ত্রিশ বছর বয়সী এই তরুণ রাজনীতিবিদকে জর্জিয়ার মানুষ এর মধ্যেই তাদের ‘ওকাসিও’ নামে ডাকতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশি অভিবাসী পরিবারের মেয়ে নাবিলা পাঁচ মেয়াদে নির্বাচিত রিপাবলিকান প্রতিনিধি রব উডালের শূণ্য আসনে ডেমোক্র্যাটদের হয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। পার্টির প্রাইমারি বা প্রাথমিক বাছাইয়ে তিনি ভালোভাবে উতরে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আসছে নির্বাচনে নাবিলা বিজয়ী হলে মার্কিন কংগ্রেসে কোন খাঁটি বাংলাদেশির অভিষেক ঘটবে বলে স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশি কমিউনিটি।
এই আসনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ে ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করেছেন। এঁদের মধ্যে নাবিলা অন্যতম। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সপ্তম ডিস্ট্রিক্টে সবচেয়ে প্রগতিশীল প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি। সম্প্রতি নানা সংবাদমাধ্যমে তাঁকে ‘আটলান্টার অ্যাওসি’ (আটলান্টার আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-করটেজ) হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণী আটলান্টায় তাঁর শ্রমিক-জনবহুল ডিস্ট্রিক্টে ইতিমধ্যেই বার্নি স্যান্ডার্স, আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও করটেজ ধাঁচের জনপ্রিয় বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন।
মার্কিন কংগ্রেসের ক্যালিফোর্নিয়া প্রতিনিধি ডেমোক্র্যাট রো খান্না নিজ দলের মূলধারার স্রোতের বাইরে গিয়ে নাবিলা ইসলামকে সমর্থন দিয়েছেন। খান্না যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রথম প্রতিনিধি, যিনি তরুণ এই প্রার্থীকে সমর্থন জানালেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্টপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচার টিম ও ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটিতে কাজ করেছেন নাবিলা। এর মধ্যেই ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট অব আমেরিকা’–এর মেট্রো আটলান্টা চ্যাপ্টারের গুরুত্বপূর্ণ অনুমোদন পেতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ‘অকোপেসি ডেমোক্র্যাটস অ্যান্ড মাটরিয়ার্ক’ নামের রাজনৈতিক অ্যাকশন কমিটি যা শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে ওঠে আসা নারীদের যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে নির্বাচিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে, সে সংস্থাটিরও বিরল সমর্থন পেয়েছেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণী।

ইন্টারসেপ্ট নিউজ এজেন্সিকে রো খান্না বলেন, ‘তাঁর প্রার্থিতা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। নাবিলা এমন এক নারী, যিনি ‘মেডিকেয়ার ফর অল’–এর বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে বোঝেন। তিনি ক্লিনটন ও বার্নি সমর্থকদের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের প্রগতিশীল ঘরানার বার্তাকে প্রসারিত করতে পারবেন।’
নাবিলা ইসলামের বর্ণ অশ্বেতাঙ্গ, মুসলিম এবং একজন নারী তিনি। এর

মাধ্যমে তাঁর উত্তরাঞ্চলীয় ডিস্ট্রিক্টের রাজনীতিতে সে রকম বৈচিত্র্যময় উত্তাপ নিয়ে আসতে পারেন তিনি। তাঁর বৈচিত্র্যময় ডিস্ট্রিক্টের রাজনৈতিক মাঠে সে রকম স্পন্দনও তিনি নিয়ে আসছেন বলে অনেকের বিশ্বাস। ‘সবার জন্য মেডিকেয়ার’, ‘গ্রিন নিউ ডিল’–এর মতো নীতি নিজের নির্বাচনী প্ল্যাটফর্মে সন্নিবেশিত করেছেন নাবিলা।
ওয়াশিংটন পোস্ট–এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত সপ্তাহের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারিতে অংশ নেওয়া ডেমোক্র্যাটদের ১০ জনের মধ্যে ছয়জনই প্রাইভেট স্বাস্থ্যবিমা একেবারে রহিত করে একক পরিশোধের স্বাস্থ্যসেবা প্রণয়নের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। এসব কর্মসূচির অন্যতম প্রবক্তা নাবিলা। যে কারণে ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ইতিমধ্যে হটসিট বলে খ্যাত এই আসনে তিনি প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে চলে আসতে সক্ষম হয়েছেন।
বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলা থেকে ইমিগ্রান্ট হিসেবে আমেরিকায় আসা বাবা–মা মাহফুজ-ফরিদার সন্তান নাবিলা কঠোর পরিশ্রমী। যিনি মায়ের অসুস্থতার কারণে নিজে সংসারের হাল ধরতে দ্বাদশ গ্রেডে পড়া অবস্থায় চাকরি জীবনে ঢুকে পড়েছিলেন। নাবিলার এমন অবস্থানে ওঠে আসার পেছনের কথা এবং তাঁর সম্পর্কে জানতে নির্বাচনী এলাকায় খোঁজ নেওয়া হয় প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার পক্ষ থেকে। আটলান্টায় তাঁর নির্বাচনী এলাকায় থাকেন হারুন রশীদ। আটলান্টার সেবা লাইব্রেরির মালিক হারুন রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি হিসেবে চাই, নাবিলার মতো এক বাংলাদেশি নারী যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারা রাজনীতিতে অগ্রসর হোন।’
নাবিলার পরিশ্রমী পরিবারের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয়ের উল্লেখ করে হারুন বলেন, ‘যারা রাজনীতি করেন বা করতে পছন্দ করেন, তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে; তারা যেন এ প্রবাসে আওয়ামী লীগ-বিএনপি আর কোন্দল পরিহার করেন। এখানকার মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন, এতেই কমিউনিটি ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রকৃত কল্যাণ হবে।’ তিনি বলেন, ‘নাবিলার মতো চৌকস প্রজন্মই আমাদের সে পথটি দেখিয়ে দিচ্ছে।
নাবিলা ইসলাম তাঁর স্লোগানে বলছেন, ‘এটা কোন নির্বাচনী প্রচার নয়, জনতার ক্ষমতায়নের আন্দোলন’ (This is not a campaign, it’s a people-powered movement)।